বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
রুগ্ন পাট শিল্প পুনরুদ্ধার বন্ধকৃত পাটকল চালু শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে খুলনায় শ্রমিক জনতা গণজাগরণে শ্রমিক নেতারা বলেন দেশের এক সময়কার শিল্পখ্যাত শিল্পনগরী খুলনা ৯০ দশকের পর থেকে বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের লালসায় ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে রুগ্ন হতে শুরু করে উপার্জনক্ষম উল্লেখযোগ্য চলমান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে বেশি ক্ষতি সাধিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনে দলীয় পাতিনেতা থেকে উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী সাথে ট্রেড ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের লালসার কুদৃষ্টিতে লুটপাট ভাগ বাটোয়ারা হতে শুরু হয় রাজস্ব অর্থসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ফলে কর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং গোপনে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এমনকি জায়গা সম্পত্তি বিক্রিও অন্যত্রে লিজ দেওয়ার অভিযোগ সহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শিল্প নগরীর অসংখ্যক শিল্প কলকারখানা অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
ফলে বিলীন হতে চলেছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক আগেই বিলীন হয়েছে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, হার্ডবোর্ড মিল, খুলনার উল্লেখযোগ্য একমাত্র টেক্সটাইল মিল যেগুলো এখন শুধুমাত্র ইতিহাসে লিপিবদ্ধ বাস্তবে নাই। অবশেষে বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ৯ টি পাটকল বেকার হয়েছে অর্ধ লক্ষ শ্রমিক সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার মেশিন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে জং ধরে ধ্বংসে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সদ্য পতিত ক্ষমতাশীল দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দামি দামি মেশিন গুলো খুলে নিয়ে বিক্রি করে নেতাদের পকেট ভারি করেছে যার কারনে কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো । যে সমস্ত শিল্প এলাকা এক সময়কার কর্ম ব্যস্ত সকাল দুপুর শ্রমিকদের আনাগোনা মুখরিত হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় গমগম করত অথচ ওই সকল এলাকা এখন কালের সাক্ষী হয়ে জনশূন্য শুনশান নীরবতা সন্ধ্যা হলে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আরো উল্লেখ রয়েছে বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দিনরাত ২৪ ঘন্টা শহরের সঙ্ঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের জুয়ার আড্ডা সাথে মাদক ক্রয় বিক্রয় ও সেবনের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
তবে গত বছরের শুরুতে জে জে আই জুট মিলসহ হাতেগোনা দুই একটি সরকারি পাটকল ইজারার মাধ্যমে চালু হলেও শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে নানান কারণে অসন্তোষ। অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিলেও ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি মালিকরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি ফলে সচ্ছলভাবে চলছে না প্রতিষ্ঠানগুলো যার কারণে অনেক সময় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে গরিমোশি করছে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। যার কারণে কর্মরত শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে জীবন চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
বন্ধ ও ইজারা কৃত পাটকল গুলোর বকেয়া বেতন সার্বিক সমস্যা সহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় খালিশপুর থানা কমিটি গঠন উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলন খালিশপুর থানার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় খালিশপুর শিল্পনগরী ক্রিসেন্ট জুট মিলে এক কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয় সভায় সভাপতি শ্রমিক নেতা মোশাররফ হোসেন ও প্রধান অতিথি মুনির চৌধুরী সোহেল খুলনার সকল শ্রমিকদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে বলেন আমরা জানি আপনারা শ্রমিক আপনারা বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বর্তমান জীবন কাটাচ্ছেন অনেক কষ্টে আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা এটাও জানেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকল সহ সারা দেশের ২৬ টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করেন। পাটকল বন্ধের ফলে প্রায় আপনারা ৭০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন এবং আপনাদের পরিবারসহ পাট সংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ বেকারত্ব অন্ধকার জীবনে দুর্বিষহ সময় পার করছে। আকাশ মেঘ বন্ধের কারণে পাটকল শ্রমিক জীবন জীবিকা স্থবির হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন বিগত সরকার পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। অতএব এই সন্ধিক্ষণ থেকে আপনাদের কিভাবে পরিত্রান করা যায় সে লক্ষ্যে আমরা আপনাদের পাশে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে যাব ন্যায্য দাবি আদায় করব আপনাদের পাওনা আপনারা বুঝে পাবেন আপনাদের জীবন আবার সচ্ছলতায় ফিরে আসবে এটাই আমাদের কাম্য। কারণ শ্রমিক ছাড়া ছোট বড় কোন ধরনের শিল্প চলেনা রাষ্ট্র চলেনা অতএব রাষ্ট্র উন্নয়ন অবকাঠামগত ভূমিকা রাখে শ্রমিক জনগোষ্ঠী তাই সবার আগে শ্রমিকদের প্রাধান্য দিতে হবে তাদের ন্যায্য পাওনা সময় মতন পরিশোধ করতে হবে।