– আবুজর গিফারী
১৮৮৫ সাল, ঠিক ১৩৯ বছর আগের পৃথিবী। তখনও বিশ্বযুদ্ধ হয়নি একটিও। মানুষ চাঁদে যাওয়ার যোগ্য হবে এর আরও ৮৪ বছর পরে। এম্পায়ার এস্টেট বিল্ডিং নির্মিত হতে আরও ৪৫ বছর। নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মাতে আরও ৩৩ বছর লাগবে, মাইকেল জ্যাকসনের প্রয়োজন ৭৩। জগদ্বিখ্যাত আবিষ্কার পেনিসিলিন উদ্ভাবিত হবে এর আরও ৪৩ বছর পরে; এর উদ্ভাবক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-ই মাত্র ৪ বছরের শিশু তখন, খেলছেন স্কটল্যান্ডের বাড়িতে। এবং, ওসময়, ওই স্কটল্যান্ডেই, আরও বেশ ক’বছর পরে ভারতবর্ষ থেকে পড়তে আসা একজন রসায়নবিদ্যার ছাত্র, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ইউনিভার্সিটি অভ এডিনবরায় অধ্যয়নরত, ২৪ বছর বয়সী একজন তরুণ মাত্র, যে-ছাত্র, আরও বেশ ক’বছর পরে জগদ্বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী হয়ে উঠবেন।
হ্যাঁ, ছবিটি সেই বছরই তোলা, ১৩৯ বছর আগে, ১৮৮৫ সালে। অক্টোবরের ১০ তারিখে।
ছবিটিকে ‘বিশ্ব-নারীর ক্ষমতা ও জ্ঞানের আদর্শ ছবি’ বলা হয়। শিরোনাম─ women in medicine. ছবিতে ৩ জন তরুণীকে দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসাশাস্ত্রের ছাত্রী। তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মার্কিনদেশের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরের ‘women’s medical college of philadelphia’য় তোলা হয়েছিলো ছবিটি। ছবিটিকে বৈশ্বিক ছবি বলার কারণ─ ছবির তিন ছাত্রী পৃথিবীর সুদূরবর্তী এশিয়ার তিন ভিন্ন দেশের মানুষ। ছবির বাঁয়ে, বসা─ ডাক্তার আনন্দাবাই জোশী, ভারতের সেরানিসোরের (কল্যাণ); মাঝখানে, দাঁড়ানো─ ডাক্তার কেই ওকামি, জাপানের টোকিওর; এবং ডানে, বসা─ ডাক্তার তাবাত এম. ইসমবুলী সিরিয়ার দামেস্কের, অধিবাসী। ওই সময়ে, পড়তে এবং ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছেয় পৃথিবীর প্রায় উল্টোপিঠের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়াটা, এক শব্দে─ অকল্পনীয়! এখনকার মানবাধিকারের মডেল যে-দেশটিতে, নারীদের ভোটাধিকার পেতে লেগে যাবে এই ছবিটির পরের আরও ৩৫ বছর! অহ্!
আপনারা, মানবেতিহাসের তিনজন শ্রেষ্ঠতম মেধাবী ও জেদি জিনিয়াস মস্তিষ্কের নারীকে দেখতে পাচ্ছেন, তাঁদের স্ব-স্ব দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরনে, যাঁরা তৎকালীন সমাজের (বলতে গেলে এখনকারও) সমস্ত সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার, তাচ্ছিল্য, প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিয়ে ও ডিঙিয়ে, নিজেদের জ্ঞান ও ক্ষমতাকে, জগতের ও জীবনের সর্বোচ্চ শিখরে তুলে নিয়েছিলেন।