মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
আজ ১৭ই মার্চ; বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির মুক্তির মহানায়ক,বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। সারাদেশে দিনটি ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, সায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
রোববার (১৭ই মার্চ) এই দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ওই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৭ই মার্চ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সনাতন সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। পরদিন ১৮ মার্চ সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ ভবনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৩ সালে পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীকালে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন তিনি। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য শেখ মুজিব বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সে মুহূর্তে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।