মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সাইদীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এ বন্দি ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন জামায়াতের এ নেতা।
গতকাল রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তাকে বিএসএসএমইউ-তে পাঠানো হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা,অপহরণ,নির্যাতন,ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ,লুণ্ঠন,ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দুটি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে জামায়াতে ইসলামী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন (দলটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য) হন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিশে শুরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতের নায়েবে আমিরের পদে রয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে জোটবদ্ধ অবস্থায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর জন্ম পিরোজপুরে। তার বাবা ইউসুফ সাঈদী ছিলেন একজন সনামধন্ন আলেম।সাঈদী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা হন এবং তার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সাথে জোট গঠন করলে তিনি জাতীয় সংসদ এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।