রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি
পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়িদের পাহাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি না মিললেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে প্রায় ১৩টি জাতিসত্তা।
এরা জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ মানুষ চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জীবন অতিবাহিত করছেন। বছরের পর বছর জুমচাষই সিংহভাগ পাহাড়ির একমাত্র সম্বল। রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে চাকমা, ত্রিপুরাসহ প্রায় ২০ হাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস।
শিক্ষা, সুপেয় পানি, চিকিৎসা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই সাজেক পাহাড়ের মানুষ গুলো।
জানা যায়, প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এরা বংশ পরম্পরায় জুমচাষে জড়িত। জুমের উৎপাদিত ফসল দিয়ে সারা বছরে খাদ্য জোগান দিতে পারেন না পাহাড়িরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিম চাষ পদ্ধতি ‘জুম’। ভৌগোলিক গঠন অনুসারে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিরুফ পাহাড় ও উপত্যকাবেষ্টিত।
এখানকার জনগোষ্ঠীর মূল জীবিকা কৃষি। তিন পার্বত্য জেলার আয়তন ১৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর ১২ হাজার হেক্টর জমি জুমচাষ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশিরভাগ পাহাড়ি মানুষই জুমের ওপর নির্ভরশীল। তবে উপর্যুপরি ও বিরতিহীনভাবে জুমে চাষাবাদ হওয়ায় কমছে জুম ভূমির উর্বরতা। ফলে উর্বরতা কমছে। জুমের ফসল না আসা পর্যন্ত অনেক সময় খাদ্য সংকটও দেখা যায় এই সাজেক পাহাড়ে।
সাজেক ইউনিয়নের ভুয়াছড়ি গ্রামের বন বিহারি চাকমা নামে এক জুমচাষি জানান, অতীতে এক পাহাড়ে জুমচাষ করার পর ১০-১৫ বছর পর সেই পাহাড় জুমের আবাদ করা হতো। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাত্র ২ থেকে ৩ বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। ‘জুমভিত্তিক’ পাহাড়িদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে শ্লথগতিতে। জুমের যা উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা বছরের খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না।
এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক গ্রাম ও পাড়ায় এখানে পৌঁছেনি নাগরিক সুযোগ- সুবিধা। বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে এই জন গোষ্টীরা।
বাঘাইহাট গঙ্গারাম গ্রামের স্থানীয় পাড়ার বাসিন্দা জ্যোতি লাল চাকমা( কার্বারী) বলেন, আমাদের এখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। শীতকালে ঝিরি ঝরনা শুকিয়ে যায়। বর্ষাকালে ঝরনার পানি দূষিত হয়ে যায়। অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। জুমচাষ করেও আমরা সারা বছর চলতে পারি না। অনেকে দিন আনে দিন খায়।
পাড়ার বেশ কয়েকজন নারী সদস্য বলেন, পানির জন্য নির্ভর করতে হয় ঝিরি বা কুয়োর ওপর। পানির জন্য সকালে গেলে বিকালে আসতে হয়। সারা বছরই পানি সংকট।
বাঘাইহাট বালুঘাত পাড়ার কার্বারি পাত্তর মনি চাকমা বলেন, বিকল্প পেশা না থাকায় বংশ পরম্পরায় জুমচাষ করে টিকে আছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। তবে তা দিয়েও সারা বছর সংসার চলে না।
তিনি আরও বলেন, পাড়ার কেউ কেউ নিজেদের উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে, আবার অনেকের সেই সার্মথ্য নেই। ‘যুগের পর যুগ’ যায় অথচ আমাদের এখানে কোনো পরিবর্তন নেই।
যে পাড়া যত দুর্গম এলাকায়, সেখানকার মানুষ ততবেশি নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত।
মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত এসব পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি এলাকার উন্নয়নে সরকারের সুদৃষ্টি চান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বাঘাইহাট ৪নং ওযার্ডের মেম্বার দয়াধন চাকমা বলেন জুমচাষকে আধুনিকায়ন করাও সময়ের দাবি। জুমচাষকে সাধারণ কৃষি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ঋণ সহায়তা প্রদান করা উচিত। এ ছাড়া পাহাড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন।