বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
জুলাই বিপ্লবের ১০০ দিন অতিবাহিত তবুও সন্তান হারানো বেদনায় কাতর সারা বাংলাদেশের অসংখ্য মীর মুগ্ধের মা। হৃদয়ের গহীন থেকে ভেসে আসা সন্তান হারানো বেদনা বারবার স্পর্শ করে স্মৃতির অ্যালবাম, খেতে ঘুমোতে ঘরের চার দেয়ালের যেদিকে তাকাই সেদিকেই যেন মনে হয় আমার মুগ্ধর হাসি ভরা মুখ আর কানে ভেসে আসে আম্মু খাবার খেয়েছ, ওষুধ খেয়েছো, তোমার শরীর খারাপ করেনি তো, আম্মু ওষুধগুলো ঠিকমত খেও তোমার কিছু হয়ে গেলে আম্মু আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে। আমার মুগ্ধ আমাকে সব সময় এসব কথাগুলো বলতো অথচ আজ আমার জীবনের সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার করে স্বৈরাচারের বুলেটের নির্মমতার আমার বুকের ভেতরে কষ্ট বেদনার তুষের আগুন জ্বালিয়ে আমার মুগ্ধকে অকালে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিতে হলো। আমি তো আমার সন্তানকে কখনো ভুলতে পারবো না আমি ঘুমোতে গেলে ও আমার মুগ্ধকে দেখতে পাই মুগ্ধর গায়ের গন্ধ আমার নাকে স্পর্শ করে আমি একজন মা হয়ে সন্তান হারানো বেদনা কি করে সহ্য করব আপনারা বলেন। এমন গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত কথা জুলাই বিপ্লবের ১০০ দিন উপলক্ষে খুলনার ছাত্র সমন্বয় ও সাংবাদিকরা শহীদ মীর মুগ্ধর পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে শহীদ মুগ্ধর মা এসব কথা বলেন। এমন আহাজারি শুধু মীর মুগ্ধের মায়ের জন্যই না আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে কাতর কন্ঠে কাঁদছে অসংখ্য সন্তান জুলাই ইতিহাসের শহীদদের মা।
উল্লেখ্য গত জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য এক নির্মম ইতিহাস আর সেই ইতিহাসের ১০০তম দিনে গতকাল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গত কাল শুক্রবার সেই বিভীষিকাময় বিপ্লবের ১০০তম দিন পূর্ণ হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বিপ্লব-সংগ্রামে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাতে দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও ছাত্রসমাজ বিশেষ কর্মসূচি আহ্বান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার মুখপাত্র এ কর্মসূচির কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২৪-এর বিপ্লবের প্রিয় সহযোদ্ধাগণ, ১৫ নভেম্বর জুলাই বিপ্লবের ১০০তম দিন উপলক্ষ্যে আমাদের অমর সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং আহত ও শহীদ পরিবারের খোঁজখবর নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী এই বিশেষ কর্মসূচি আহ্বান করছে। মূলত জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের পরিবারগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রদর্শন এবং তাদের সম্মান জানানোই হচ্ছে এ কর্মসূচির লক্ষ্য । উল্লেখযোগ্য এই কর্মসূচির বিভিন্ন ধাপগুলোর মধ্যে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সশরীরে যোগাযোগ করা, তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া। আর্থিক সহায়তা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ সংগ্রহ করা। রাষ্ট্র সংস্কারে মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা; সেই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবের দুর্বিষহ স্মৃতি সংরক্ষণ করা। শহীদদের কবর জিয়ারত ও দোয়ার আয়োজন করা উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত এসব উদ্যোগ সফল করতে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।তাছাড়া যে সকল শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে সকল শহীদ পরিবারকে তো অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করবেনই পাশাপাশি যারা আহত হয়ে পঙ্গু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছে না তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।