পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর বাউফলে তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে আচমকা ঝড়ের কবলে পরে প্রান হারায় ইব্রাহিম ফরাজি (৫০) নামের এক জেলে। নিহত ইব্রাহিম উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরওয়াডেল গ্রামের (৯নং ওয়ার্ডের) খানকা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো: মন্নান ফরাজীর সেজো (৩য়) ছেলে। রাত ৮টার দিকে ইব্রাহিমের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার (৭মার্চ) সকালে ৭টার দিকে প্রতিদিনের মতো মাছ ধরার উদ্দেশ্য তেতুলিয়া নদীতে যায় স্থানীয় জেলেরা। ১১টার দিকে আকস্মিক ঝড়ে কয়েকটি ট্রলার ডুবে যায়। এসময়ে জেলেরা সাঁতরে নদীর কিনারে ফিরে আসলেও ইব্রাহিম ও ইসমাইল রাঢ়ী ফিরে আসতে পারেনি। ঝড় থেমে গেলে নিখোঁজ দুই জেলেকে খুঁজতে বের হোন স্থানীয়রা। নদীতে কয়েক দফা জাল ফেলেও তাদের সন্ধান মেলেনি। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তেঁতুলিয়া নদীর বগী পয়েন্টে জাল ফেলে ইব্রাহিম ফরাজির মৃত দেহ উদ্ধার করে জেলেরা। রাত ৯টা পর্যন্ত অপর নিখোঁজ জেলে ইসমাইলের সন্ধান মেলেনি।
মৃত ইব্রাহিম ফরাজিকে উদ্ধার করা জেলে আব্দুল খান জানান, কয়েক দফায় খোঁজা খুজি করেও যখন ইব্রাহিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন আমার মনে হলো যে ইব্রাহিম ভাই আর বেঁচে নেই। তখন জালে অতিরিক্ত ওজন দিয়ে জাল ফেলে কিছুক্ষন পরে জাল টানতেই ভেসে উঠে ইব্রাহিম ভাইয়ের লাশ।
নিখোঁজ ইব্রাহিমের মরদেহ উদ্ধারে বাউফলে কাল বৈশাখী ঝড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ৩জন। রবিবার (৭মার্চ) সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম(৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে। রাতুলের বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামে। বাবার নাম জহির সিকদার। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বজ্রপাতে তিনি মারা গেছেন। আর সুফিয়া বেগমের বাড়ি উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়েনর চরআলগী গ্রামে। তার স্বামীর নাম মৃত আহম্মেদ প্যাদা। ঘরের উপর গাছ চাপা পরে তিনি নিহত হন। এ ছাড়াও ঝড়ে উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে অন্ধকার হয়ে যায় পুরো বাউফল। পরে হঠাৎ ঝড়ের সঙ্গে শীলা বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বাউফলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত, বেশ কিছু গবাদি পশুর মৃত্যু ও কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়ে। এ ছাড়া গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে সাবিহা নামে এক নারী ও মেয়ে ইভা ও দুই বছর বয়সী শিশু গুরুতর আহত হয়েছেন। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে তার ছিঁড়ে গেছে। এতে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শীলা বৃষ্টিতে তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ঝড়ে ৩৩ কেবি মেইন লাইনের তার ছিঁড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ পড়ে আছে। ঈদের আগে শ্রমিক সংকট থাকায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। পৌর শহরে রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা কালবেলাকে বলেন, ১৭ জনকে বাউফল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এক কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ধারণা করছি, বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপন করতে পারিনি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবারের সহায়তা দেয়া হবে। যাদের বসতঘর সম্পুর্ন বিধ্বস্ত হয়েছে পরবর্তীতে তাদের ঘর তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রক্রিয়াধীন।