মোঃ আশরাফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি.
মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত। একই কক্ষে মা ও দুই সন্তানের নিথর দেহ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলছে—পারিবারিক কলহের জেরে শিখা আক্তার (২৯) তাঁর ছেলে আরাফাত ইসলাম আলভি (৯) ও মেয়ে সাইফা আক্তারকে (২) বিষপান করিয়ে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। তবে প্রতিবেশী, পারিবারিক সূত্র ও উদ্ধার হওয়া আলামতগুলো অন্য কোনো রহস্যের দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না—তা এখনো অনুসন্ধানে রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ শে সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে বিছানায় শিখার লাশ ও মেঝেতে পড়ে থাকা দুই সন্তানের নিথর দেহ দেখতে পায়। ঘটনাস্থল থেকে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইট ট্যাবলেটের একটি খালি কৌটা উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিখা আক্তার মালয়েশিয়া প্রবাসী দেওয়ান শাহীন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাহীন আহমেদ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্দারমানিক এলাকার বাসিন্দা। তবে শিখার আগের সংসার থেকে ছেলে আরাফাতের জন্ম এবং দ্বিতীয় সংসারে জন্ম নেয় কন্যা সাইফা।
প্রতিবেশীরা জানান, শিখা আক্তার গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বামী শাহীনকে নিয়ে ওই বাসায় উঠেন। কিছুদিন পর শাহীন মালয়েশিয়া ফিরে যান। এর পরপরই শিখা বাসা ছেড়ে চলে যান। আবার চলতি মাসের শুরুতে সন্তানদের নিয়ে নতুন করে ওই বাসায় ওঠেন।
প্রতিবেশী আলমগীর বলেন, সোমবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ দেওয়ার জন্য শিখার দরজায় নক করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। ভেবেছিলেন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু পরদিনও দরজা না খোলায় সন্দেহ হয়। পরে বাড়িওয়ালা মুক্তাদির খবর পেয়ে পুলিশকে জানান। মুক্তাদির বলেন, পাশের বিল্ডিং থেকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখা যায় ভেতরে তিনজনের নিথর দেহ।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—শাহীন আহমেদ মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার পর একা সন্তানদের নিয়ে শিখার মানসিক অবস্থা কী ছিল? তিনি কি আর্থিক সংকটে ছিলেন? নাকি সম্পর্কগত দ্বন্দ্ব ও সামাজিক চাপ তাঁকে এমন চরম সিদ্ধান্তে ঠেলে দেয়? আবার অনেকে বলছেন, শিখা যদি নিজেই আত্মহত্যা করে থাকেন, তবে কেন আগে সন্তানদের মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন?
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
পুলিশ এখন পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মানসিক চাপ এবং আর্থিক সংকট—সবগুলো দিকই খতিয়ে দেখছে।
এ ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, সামাজিক কাঠামোরও করুণ প্রতিচ্ছবি। পারিবারিক অশান্তি, মানসিক অবসাদ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চাপ মানুষকে কতটা ভয়াবহ সিদ্ধান্তে ঠেলে দিতে পারে, পশ্চিম বান্দুটিয়ার এই ঘটনা তার নির্মম প্রমাণ।