নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
এমআরআই মেশিন ক্রয়ের ১৪ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকা ফেরত পাওয়ায় দায় মুক্তি পাচ্ছেন বরখাস্ত হওয়া সেই প্রকল্প পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পাল।
এর আগে, মেশিন না কিনেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেড ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পালের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। সেই অভিযোগে মাস কয়েক আগে উপ-পরিচালক পদ থেকে বরখাস্তও হন কৃষ্ণ কুমার পাল। অবশেষে গুরুতর এমন অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সময় মতো স্থাপন করা হয়। তবে এমআরআই মেশিন সরবরাহকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেড কার্যাদেশের ২ বছরেও তা হস্তান্তর করেনি। এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেয়া মেশিনের সমমূল্যের নিরাপত্তা জামানতের ১৪ কোটি ২ লাখ টাকার পে অর্ডার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর না করে অবৈধভাবে আটকে রাখে প্রিমিয়ার ব্যাংক। গত ২ বছর ধরে পে-অর্ডারের টাকা ফেরত পেতে বার বার ধর্না দিলেও কর্ণপাত করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
১৮ অক্টোবর থেকে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে টনক নড়ে। সংবাদ প্রকাশের ৫ মাস পর (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রিমিয়ার ব্যাংকের ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড শাখা নিরাপত্তা জামানতের টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে। এমআরআই মেশিনের জামানত বাবদ ১৪ কোটি ২ লাখ টাকা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে হাসপাতালের অগ্রণী ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ এস এস রোড শাখার হিসাবে টাকা জমা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই সব কাজ করেছি। যার প্রমাণ আজ আমরা এমআরআই মেশিনের টাকা ফেরত পেয়েছি।সত্যের জয় হয়েছে। আমি কুচক্রি মহলের আক্রোশের শিকার । অসাধু ঠিকাদার ও প্রিমিয়ার ব্যাংক যৌথভাবে আইনের অপব্যবহার করেছে। তারা একদিকে জনগনকে যেমন সরকারি সেবা বঞ্চিত করেছে, তেমনি বিপুল রাজস্ব আদায়ে ক্ষতি করেছে। আমাকে নানাভাবে হয়রানি ও হেয় করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে অর্থ ঋণ আদালতে মিথ্যা মামলা করে সময়ক্ষেপণ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যারা সামাজিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, তাদের বিচার চাই।’ এ সময় টাকা ফেরত পেতে সহযোগিতাকারীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমআরআই মেশিনের পে-অর্ডার ভাঙিয়ে হাসপাতালের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে। আমরা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি।
সূত্র বলছে, গত ২০২২ সালের ৮ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেডকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমআরআই মেশিন সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়। একই বছরের জুন মাসে হাসপাতালের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেডকে এমআরআই মেশিন সরবরাহ বাবদ ১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে হাসপাতাল। করোনা মহামারির কারণে এমআরআই মেশিন সরবরাহ করতে না পারার কারণ দেখিয়ে অঙ্গীকারনামা প্রদান করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বিল গ্রহণের সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেড কোম্পানি এমআরআই মেশিন ক্রয়ের বিপরীতে নিরাপত্তা জামানত হিসাবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পে-অর্ডারে স্বাক্ষর করা চেক ইস্যু করে। যার নম্বর (০১) PO, 3580862 সাত কোটি টাকা ও (২) পে-অর্ডার ন PO3580864, সাত কোটি দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা। মোট ১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ইনক্যাশমেন্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামালের বিপরীতে পে-অর্ডারে স্বাক্ষরিত চেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে। নির্ধারিত সময়ের পরে কয়েকদফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌখিক ও লিখিতভাবে তাগাদা দিলেও মেশিনটি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা পে-অর্ডার নগদায়নের জন্য আবেদন করলে টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। অবশেষে সেই টাকা ফেরত পেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।