আব্দুল গাফফার শেরপুর( বগুড়া) প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বগুড়ার শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অনার্স কলেজের কৃষি প্রদর্শক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার (০২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিমের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি গঠিত কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।কমিটির সদস্যরা হলেন- উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আক্তার আহবায়ক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম নজরুল ইসলাম ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সদস্য। এরআগে অভিযুক্ত ওই কৃষি প্রদর্শকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার বেলা দশটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ঘন্টাব্যাপি ওই কর্মসূচি চলাকালে মহাসড়কের উভয়পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে তিনি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসাযদিলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের কৃষি প্রদর্শক মাহবুবুল আলম ছাত্রীদের পর্দায় থাকতে নিষেধ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কোনো ছাত্রী নেকাব পড়ে কলেজে আসলে তিনি নিজ হাত দিয়ে খুলে দেন। এসময় কৌশলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন তিনি। এছাড়া ছাত্রীদের বিভিন্ন কায়দায় কাছে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন ওই প্রর্দশক। ফলে কলেজে ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। পাশাপশি তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিগত ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি জানিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অদ্যবধি অভিযুক্ত প্রদর্শকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ও কৃষি প্রদর্শক মাহবুবুর রহমানের অপসারণ ও বিচার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানান তাঁরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কৃষি প্রদর্শক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কলেজের কিছু শিক্ষক ছাত্রীদের উস্কে দিয়ে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছেন। এছাড়া তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও মহাসড়ক অবরোধসহ ছাত্রীদের আন্দোলনের বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কী-না তা খতিয়ে দেখতে হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি জানার পরই একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এরমধ্যে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করার পর তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি তাদের জানাই। এরপর তারা কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যান বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: এরআগে গত ২৯তারিখে একই দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।