আব্দুল গাফফার শেরপুর( বগুড়া) প্রতিনিধি
স্থানীয় স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিদের অব্যাহত হুমকি-ধামকির কারণে প্রায় দুই মাস যাবৎ তার কর্মস্থলে যেতে পারছেন না বগুড়ার শেরপুর উপজেলার হাপুনিয়া মাহাবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দানিসুর রহমান। এমনকি বিদ্যালয়ে অবস্থিত তাঁর অফিস কক্ষটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন ওইসব ব্যক্তিরা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়া এলাকার কতিপয় স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে পদত্যাগ ও অপসারণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এরইমধ্যে ওইসব অভিযোগগুলো তদন্তে গঠিত একাধিক কমিটি কাজও শুরু করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই প্রধান শিক্ষককে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তারা। ফলে নিজের নিরাপত্তাহীনতায় কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। প্রধান শিক্ষক দানিসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে গেলে আমাকে প্রাণনাশ করা হবে বলে অব্যাহতভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক ও মানুষিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ছুটি নিতে হয়। তাই দুই মাস যাবত কর্মস্থলে যেতে পারছি না। ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করার খবর পেয়ে গত ২৮নভেম্বর ওইসব ব্যক্তিরা বিদ্যালয়ে এসে আমার অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পরে বিষয়টি শেরপুর থানা-পুলিশকে জানান বলে দাবি করেন তিনি।
এই প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ১৯৯৩ সালে শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তিনি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুরুতে চাটাইয়ের বেড়া ও টিনশেডের ঘর ছিল। পরবর্তীতে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বর্তমানে দুইটি বহুতল একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়েছে। বিগত ২০১৪ সালের পর থেকে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়। এরপর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে চার তলা ফাউন্ডেশনসহ একতলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থী ও স্কুলের নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল হান্নান নিজেকে নিদোর্ষ দাবি করে বলেন, ওই প্রধান শিক্ষককে কোনো হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অসুস্থতার ভান করে ছুটি নেন তিনি। তবে তার অফিস কক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ-পত্র যেন অন্যত্র সরিয়ে নিতে না পারেন সেজন্য এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে ওই শিক্ষকের কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, যে কোনো বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখার এখতিয়ার কারো নেই। প্রধান শিক্ষকের মাধামে বিষয়টি জানার পর ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। পাশাপাশি ওই শিক্ষককে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।