আবুজর গিফারী, বেড়া উপজেলা প্রতিনিধিঃ
পাবনার বেড়া মডেল থানার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলার নবাগত পুলিশ সুপার জনাব মোরতোজা আলী খান। প্রধান অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার বলেন যে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্টে দেশে বিরাট বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর মূল নায়ক ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পালন করেছে সাধারণ জনতা। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যের শিকার ভুক্তভোগী জনগণ রয়েছে; পুলিশের অনেক সদস্য ও এই বৈষম্যের শিকার। প্রধান অতিথি বলেন যে,” আমি নিজেও বৈষম্যের শিকার”।
পাবনার পুলিশ সুপার আরো বলেন, জাতীয় জীবনে দেশের এই পরিবর্তন একান্ত কাম্য ছিল। এই পরিবর্তনকে কাজে লাগাতে হবে। উর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং ভুল সিদ্ধান্তে অনেক পুলিশ সদস্য বিপথগামী হয়েছিলেন। সে কারণে পুলিশবাহিনী অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।
৫ আগস্ট এর পরিবর্তনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক সদস্য ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের কাজ চালিয়েছে। তিনি বলেন, সেজন্য ওই সকল ছাত্রদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রধান অতিথি আরো বলেন, এই পরিবর্তনকে শতভাগ কাজে লাগাতে হবে এবং সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে যেন ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন বিফলে না যায়। তিনি উপস্থিত সবাইকে অনুরোধ করেন যে,আসছে দুর্গাপূজার সহ সংখ্যালঘুদের কোন ব্যাপারে যেন কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে সুদৃষ্টি রাখতে হবে।
সংখ্যালঘুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শ্রী ভিকুরাম। ভিকুরাম তার বক্তব্যে বলেন যে, অতীতে পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে এর জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে সভায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জামায়াতে ইসলামী বেড়া উপজেলার সহকারী সেক্রেটারি, জনাব আবুজর গিফারী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে, ২০২৪ এর স্বাধীনতার আন্দোলনে একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলাম দেশ ও জাতিকে জালিমের জুলুম থেকে মুক্ত করার জন্য। ৫ আগস্ট আমার এক সহযোদ্ধা স্বৈরাচারীরে লেলিয়ে দেয়া অতি উৎসাহী এক পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন, সেই স্মৃতি এখনো ভুলতে পারছিনা। আমরা জীবন বাজি রেখে এই দেশকে স্বাধীন করেছি দেশকে আবার শোষণের হাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়। রাষ্ট্র এখন সংস্কারের কাজ চলছে, নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য জাতি গঠনে কাজ চলছে, এই সময় প্রতিটি দল প্রতিটি নাগরিক সংগঠনের সহযোগিতা আমরা কামনা করছি। দ্বিতীয় স্বাধীনতায় অংশ নিয়ে আমি নিজেও আহত হয়েছি, শরীরের ক্ষত এখনো শুকায়নি অথচ ইতিমধ্যেই যারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে রাষ্ট্রকে কলুষিত করার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তাদের অনুরোধ করবো এখনই থেমে যান। তা না হলে রাষ্ট্রের জনগণ আপনাদের কেউ প্রত্যাখ্যান করবে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বলেন যে, দল-মত নির্বিশেষে নাগরিকের অধিকারের জন্য কাজ করুন, আমরা ছাত্র জনতা কল্যাণমূলক কাজে আপনাদের পাশে থাকবো।
উক্ত মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বেড়া উপজেলার আমির জনাব আতাউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি জামায়াত সহ দেশের সব রাজনৈতিক দল মিলে জগৎদল পাথর স্বৈরা শাসককে আমরা ক্ষমতাচ্যুত করতে পারিনি। আল্লাহতালার অশেষ মেহেরবানীতে আবাবিল পাখির মত ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশের সমস্ত মানুষের অংশগ্রহণে জাতি আজ মুক্ত হয়েছে। আমরা এখন অন্তত মুক্ত ভাবে কথা বলতে পারছি। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে ধৈর্য সহকারে অংশগ্রহণ করে দেশকে একটা শক্তিশালী কাঠামোর উপরে দাঁড়াতে যার যার অবস্থানে ভূমিকা রাখতে হবে। জনাব আতাউর আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সনাতন ধর্মবলম্বীদের প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। সনাতন ধর্মের প্রতিনিধিদের সাথে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমরা হিন্দু মুসলিম একসাথে বসবাস করি, সুতরাং শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে একটি সুন্দর সমাজ কায়েম করার চেষ্টা করে যাব, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জনাব খাজা বলেন যে, ৫ আগস্ট এর পরিবর্তনের পর দিনরাত পরিশ্রম করে পুলিশের ভূমিকায় তারা কাজ করেছেন যা অত্যন্ত কষ্ট করছিল, তবুও তারা পিছপা হন নাই এই কারণে যে, দুষ্কৃতকারীরা যেন দুর্বল ও সংখ্যালঘুদের উপরে কোন রকমের অন্যায় অত্যাচার না করতে পারে।
অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ আব্দুল হান্নান, সভাপতি, বেড়া প্রেসক্লাব।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, এডিশনাল এসপি বেড়া সার্কেল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বেড়া মডেল থানা এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত), বেড়া মডেল থানা।