মো : তুহিন আলম রেজুয়ান নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :
নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর কিশোর মোস্তাকিন হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোস্তাকিনের দুই ভাবী রোজিনা বেগম (২৮) ও তাছলিমা বেগম (২০) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মামলার প্রধান আসামী রায়হানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার তাদের গ্রেফতার ও কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার বিজ্ঞ আদালতে রায়হান উদ্দীন স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও এলাকার মৃত জফর মিয়ার ৪র্থ ছেলে মোস্তাকিন মিয়া (১৭) কে গত ২৪ নভেম্বর রাতে তার শয়ন কক্ষে জবাই করে হত্যা করা হয়। ঘটনার প্রথম থেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংবাদকর্মীরা ভাবীদের পরকীয়ার বলি হয়েছে কিশোর মোস্তাকিন এমন ধারনা পোষন করে আসছিল। কিন্তু নিহতের মা ফুলবানু বিবি ছেলের বউয়েরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা বিশ্বাস করতে নারাজ। তিনি একই এলাকার রায়হান উদ্দীন সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন (পিপিএম) এর দিকনির্দেশনায় এস আই মো: তরিকুল ইসলাম, এস আই আব্দুল কাদের, এস আই পিযুষ কান্তি দেব, এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ আসামী কে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। ঘটনার ১১ দিন পর র্যাব-৯ এর সহযোগিতায় যৌথ অভিযান চালিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামী রায়হান উদ্দীনকে গ্রেফতার করে। গতকাল শুক্রবার সে আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে। তার দেখানো মতে জমি থেকে একটি তালা চাবী এবং তার শয়ন কক্ষে তল্লাশি করে রায়হানের পরনের জিন্সের প্যান্ট এর পকেট থেকে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করে। ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে। ঘাতক রায়হান জানায়, দীর্ঘ ৩ বছর ধরে প্রথমে নিহতের মেজো ভাবী তাছলিমা বেগমের সাথে পরে বড় ভাবী রোজিনা বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। এই সুবাদে প্রতিদিন রাতে উভয়ের কক্ষে যাতায়েত হতো,, এমনকি প্রতিদিন অবৈধ মেলামেশার জন্য নিহত মোস্তাকিনের ভাবিরা জোরাজোরি করতো, তার জন্য রায়হান প্রতিদিন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে আসতো, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রামে বিচার শালিস হয়। বিচারে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও রায়হান উদ্দীন প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। গত ২৪ নভেম্বর রাত অনুমান ৮/৯ টার দিকে তাদের বাড়িতে যায়। প্রথমে মেজো ভাবী তাছলিমা বেগমের সাথে মেলামেশা করে। পরে বড় ভাবী রোজিনা বেগমের রুমে যাওয়ার সময় নিহত মোস্তাকিন দেখে ফেলে। এ সময় মোস্তাকিন থাকে বলে, এর আগেও তুমি আসা যাওয়া করছো, তোমাকে নিষেধ করলেও শুননা। মা ফুলবানু বিবি বাড়িতে আসলে সব বলবো। তখন দুই বউ ও রায়হান পরিকল্পনা করে মোস্তাকিনকে হত্যা করার। পরিকল্পনানুযায়ী রায়হান ইমামবাড়ী বাজার থেকে ১ টি ছুরি ও দুইটি তালা কিনে আনে। পরে ৩ জন মিলে নিহত মোস্তাকিন মিয়ার শয়ন কক্ষে যায়। সেখানে মেজো বউ তাছলিমা বেগম তার দু’পা ধরে রাখে। বড় বউ রোজিনা বেগম তার হাত ও শরীরে ধরে রাখে। এসময় রায়হান উদ্দীন বাম হাত দিয়ে মোস্তাকিনের মুখ চেপে ধরে ডান হাত দিয়ে গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। পরে রায়হান পালিয়ে যায়। এদিকে পরিকল্পনানুযায়ী নিহত মোস্তাকিনের ভাবীরা সুর চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। উল্লেখ্য, ওই গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ ছেলে। প্রায় ৬ বছর আগে জফর মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। মৃত জফর মিয়ার বড় ছেলে ফজলু মিয়া দুবাই এবং মেজো ছেলে সজলু মিয়া ওমান প্রবাসী, ৩য় ছেলে সজল মিয়া মৌলভীবাজার থানার সরকার বাজারে ইটভাটায় কাজ করে, চতুর্থ নিহত মোস্তাকিন মিয়া বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ছোট ছেলে তামিম মিয়া ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। বড় দুই ছেলের স্ত্রী রোজিনা বেগম (২৮) ও তাসলিমা আক্তার (২০) সহকারে মামলার বাদী ফুলবানু বেগম ৪ বেডরুমের বসতঘরে বসবাস করে আসছিলেন। এব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল হোসেন, (পিপিএম) গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীদের হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।