রশিদুল ইসলাম কালিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তরণ ডিগ্রি কলেজ। কলেজটি স্থাপিত হয় ১৯৯৮ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছিলেন অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই একক ক্ষমতাবলে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রি ও তার পুত্র রাকিবুজ্জামান এবং তার ভাই সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুবুজ্জামান এর ছত্র-ছায়ায় একরে পর এক স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলো।
২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত ১ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে অবৈধভাবে ২০২২/২৩ শিক্ষা বর্ষের উপবৃত্তি পাওয়া ৩২ জন ছাত্র/ছাত্রীদের কাছথেকে উপবৃত্তি বন্ধের ভয় দেখিয়ে জন প্রতি ১৫০০/- থেকে ২০০০/- টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের বৈষ্যমের শিকার শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে ছাত্র জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এমতবস্থায় অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন উপবৃত্তির বিষয়ে টাকা নেওয়ার শিকার করে সাময়িক ছুটির দরখাস্ত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তথা উত্তরণ ডিগ্রি কলেজ এর সভাপতি বরাবর।
উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জহির ইমাম বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে আমলে নিয়ে ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মোঃ আবু বকর সিদ্দীক কে উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের দ্বায়িত্ব অর্পন করেন।
উত্তরণ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শিক্ষক-কর্মচারীগন দীর্ঘদিন থেকে নির্যাতিত হওয়ার কারনে গত ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীগন।
অভিযোগের বিষয়ে উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক মহোদয়ের সাক্ষাৎকালে তিনি জানান অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন আমাদের সকলের উপরের যে নির্যাতন স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন তারই বিষয়ে প্রমানাদি সহ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তিনি আর বলেন অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যায়ের হিসাব নিকাশ, ভাউচার, ক্যাশখাতা দীর্ঘদিন থেকে অভ্যান্তরিন নিরীক্ষা কমিটি ছাড়াই ইচ্ছামত পরিচালনা করেন, উচ্চতর স্কেল প্রদানের জন্য তিনি প্রতি শিক্ষকের কাছে চাপ প্রয়োগ করে ১০-১৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন। আমাদের বাংলা শিক্ষক জনাব গোলাম মোস্তফা টাকা না দেওয়ায় তার সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনের কাগজপত্র প্রেরণ বন্ধ রেখেছিলো। মিনিষ্ট্রি অডিটের সময় শিক্ষক-কর্মচারীর নিকট এক থেকে দেড় মাসের বেতম সমপরিমান টাকা নিয়েছেন। বিএম শাখার শিক্ষকদের এম.পি.ও এর সময় জন প্রতি এক থেকে দুই লক্ষ (১০০০০০-২০০০০০) টাকা নিয়েছেন। স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ৪০( চল্লিশ) জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রতি জনের কাছে ৫-৭ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রায় ৩ (তিন) কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। স্নাতক এমপিও ভুক্তি, স্নাতক ১ম(২০২৩/২৪) শিক্ষা বর্ষের ভর্তি বাবদ ৬০,০০০/- টাকা, কলেজের ফান্ড, গাছ, ক্লাস রুমের ফ্যান, টিআর প্রকল্পের আওতায় কলেজের মাঠ ভরাট বাবদ বাজেটের টাকা, সেশন ফি, লাইব্রেরী ফি, খেলাধুলা, মাহফিল, স্কাউট, মসজিদ বাবদ টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে উত্তলন করে অনুষ্ঠান না করে অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন আত্মসাৎ করেন।
শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আইসিটি অফিসার জনাব মোঃ মোস্তফা চৌধুরী মহোদয়কে। কালীগঞ্জ উপজেলা আইসিটি অফিসার জনাব মোঃ মোস্তফা চৌধুরী মহোদয়ের সাথে অভিযোগের তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে তদন্তের জন্য উত্তরণ ডিগ্রি কলেজ গিয়েছিলাম। তদন্ত কালে কলেজের জমিদাতা সদস্য, সুধীজন, শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ সহ অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকালে জমিদাতা সদস্য সহ শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ অভিযোগ এর বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী আমাকে দাখিল কলেন। অভিযোগের সত্যাদি থাকা সত্বেও অধ্যক্ষ মোঃ খালেদ হোসেন অস্বীকার করে লিখিত অঙ্গিকারনামা আমার নিকট জমা দেন। আমি আমার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছি খুব শিগ্রই তা উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা করবো।
এদিকে উত্তরণ ডিগ্রি কলেজ এর সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জহির ইমাম মহোদয়ের সাক্ষাৎকালে তিনি জানান উক্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা আইসিটি অফিসার ০৮/১০/২০২৪ ইং তারিখে ১৫ নং স্বারকমূলে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত অন্তে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতা প্রকাশ পেয়েছেন।