নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়ায় এক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে কিশোরীকে দশম বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌর এলাকার গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা দলিল লেখক মোঃ জিয়াউর রহমান এর ছেলে সেনা সদস্য মোঃ বাকের ওরফে পিয়াস ওরফে বাকি বিল্লাহ গত চার বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকুরীর দুই বছর পর মাউলি গ্রামের আবেদ মোল্যার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে শুরু হয় প্রেমজ সম্পর্ক। মোবাইল, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার সহ নানা মাধ্যমে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ কথা হতো। এমনকি নানা রঙের ছবি-ভিডিও দেয়া-নেয়াও হতো। তাদের মধ্যে কয়েক দফায় সরাসরি দেখা-সাক্ষাতও হয়েছে। অভিযুক্ত বাকের বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল সেনানিবাসে কর্মরত আছেন বলে ওই ছাত্রী জানান।
ওই কিশোরী অভিযোগ করেন, চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি সেনা সদস্য বাকের আমাকে বিয়ে করতে যাবার কথা বলে তার গ্রামের বাড়ি পাঁচুড়িয়ায় নিয়ে যায়। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে বাকের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তখন বাকের আমাকে ধর্ষণ করে। ওই বাড়িতে বাকেরের বন্ধু পল্লব(প্রিয়) ছিলো। এসময় বাকের আমাকে বলে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে বিয়ে করবো। ধর্ষণের কয়েক মাস পর বিয়ে করতে বললে বাকের নানা তালবাহানা শুরু করে। বাকের সহ তার আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে সকলেই আমার সাথে দূর্ব্যবহার করে। তারা জানায়, বাকের অন্য কোথাও বিয়ে করেছে। পরে বাকের আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমাকে মোট দুবার পাঁচুড়িয়া গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে।
ওই ছাত্রী আরো জানান, উপায়ন্তর না পেয়ে আমি গত ২ জুন লোহাগড়া পৌরসভার গোপিনাথপুর গ্রামস্থ্য বাকেরের বাড়িতে যাই। বাকেরের মা-বাবাকে জানাই ” আপনাদের ছেলে আমার সাথে দুই বছর যাবৎ প্রেম করেছে। এমনকি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি বাকেরকে বিয়ে করতে চাই।” বাকেরের বাবা-মা পুলিশকে খবর দিলে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার কথা শোনে। এরপর পুলিশ বিষয়টি লোহাগড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়াকে অবগত করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করে চলে যায়। এরপর পৌর কাউন্সিলর তার নিজ বাড়ির উঠানে ছেলের বাবা ও চাচা এবং মেয়ের বাবা কে নিয়ে ঘটনার মিমাংশার জন্য বসেন। বৈঠকে ধর্ষিতা ছাত্রী বলেন, যেহেতু আমাকে নষ্ট করা হয়েছে। আমাকে বিয়ে করতে হবে। না হলে আত্মহত্যা করবো। এসময় বাকেরের বাবাসহ চাচা জাহিরুল ইসলাম বলেন, বাকের গত ঈদের পরে বিয়ে করেছে। তাই ওই কিশোরীকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। ওই মেয়েকে কিছু টাকা দিয়ে মিমাংশা করে দেন।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তী শালিস বৈঠকে অভিযুক্ত ছেলে সেনা সদস্য কে উপস্থিত থাকতে হবে। তাই আগামী ২১ জুন শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শালিসের শেষ পর্যায়ে দুটি পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ নিয়ে হাতাহাতি হট্রগোলের ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত সেনা সদস্য বাকের স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার সাথে ওই ছাত্রীর প্রেম ছিলো। ধর্ষণের কথা সঠিক নয়। আমি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখাইনি।
পৌর কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ বিষয়টির মিমাংশার জন্য আমার ঘাড়ে চাপাইছে। এ ঘটনা নিয়ে আমার মানসম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি এর শালিস করতে পারবো না।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ কাঞ্চন কুমার রায় জানান, এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।