বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
দেশের সাধারণ মানুষের চলমান জীবনযাত্রার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও দৈনন্দিন খাদ্য বস্তুর অন্যতম উপকরণ চাউলের বাজার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত করে সহনীয় পর্যায়ে আনার চেষ্টা করলেও আজকের দিন পর্যন্ত বাজার পর্যায়ে কমেনি কোন প্রকারের চালের দাম। চালের বাজার চলছে পূর্বের গতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের চাউল আমদানের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত ঘোষণা দিলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তির আলোর আভাস পেলে ও বাস্তবতায় তার কোন সুফল পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছে দেশের সাধারণ ভোক্তাগন এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের শুল্কমুক্ত করে দিয়েছিল চাল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ঘোষণা অনুযায়ী ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না উপরন্ত আগের থেকেও দুই এক টাকা বিশেষ কিছু চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে । এদিকে আমদানিকারক পাইকার ব্যবসায়ীরা চাউল আমদানি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন ভারতের স্থানীয় বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। তাই দেশের খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল সোমবার খুলনা বড়বাজার, নিউ মার্কেট, শেখপাড়া, দোলখোলা, নতুন বাজার, টুটপাড়া জোড়া কল বাজার সহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে তথ্য পাওয়া যায় আটাশ চাল প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, নতুন আটাশ ৫৬ থেকে ৬০, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২, পায়জাম ৬৭ থেকে ৬৮, বাসমতি ৯৪ থেকে ৯৮, আমন ৭০, পোলাও চাল ১২০, নাজির শাইল ৭৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মান ও বাজারভেদে চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।
এক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে দেড় বছর চাল আমদানি বন্ধ থাকার পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এসব চাল টনপ্রতি রকমভেদে আমদানি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪৭০ মার্কিন ডলারে। আগে চাল আমদানিতে শুল্ক ছিল ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ২০ অক্টোবর তা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। আর ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এর পরও আগের দামেই চাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনা বড়বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাগদা ট্রেডিং এর মালিক দেশ চ্যানেলকে বলেন, বর্তমানে আটাশ চালের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেশি। প্রতি বস্তায় এর দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে এলসি চাল বাজারে এলে দাম কিছুটা কমবে। মিলাররাও দাম রাখছেন বেশি। এলাকাভিত্তিক সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এটাও বলেছেন বড় গ্রুপগুলোর সিন্ডিকেটই চালের বেশি দামের মূল কারণ।নগরীর শেখপাড়া বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন আবু সাঈদ বলেন, সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্কমুক্ত করেছে। এর কোনো প্রভাব নেই বাজারে। নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম কমছে না। এর বাজার স্বাভাবিক না হলে আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের বেঁচে থাকা কষ্ট। দোলখোলা এলাকার চাউল ব্যবসায়ী আবুল মিয়া বলেন, চালের দাম আগেই বেড়েছে। গত সপ্তাহে শুধু মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দেড় টাকা করে। নতুন চাল বাজারে না এলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। আর শুল্কমুক্ত চাল এখনো বাজারে আসেনি। এগুলো এলে দাম কিছুটা কমতে পারে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) খুলনা অঞ্চলের প্রধান দেশ চ্যানেল কে বলেন চালের দাম বৃদ্ধির প্রধান দুটি কারণ, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও বাজার মনিটরিংয়ের অভাব। অতি মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে থাকেন। সরকার দাম কমালেও ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কেনার অজুহাত দেন। ফলে চালের দাম তোমার সম্ভাবনা থাকে না।
তিনি আরও বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব থাকলে পণ্যমূল্য কমবে না। সরকার নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে দাম কমাতে পারে। নিয়মিত তদারকির অভাবে সরকারের শুল্ক প্রত্যাহারের সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ। গত সপ্তাহে খুলনা বিভাগের খাদ্য নিয়ন্ত্রণের প্রধান কর্তা জানিয়েছিলেন, চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে সরকার এবার সাড়ে পাঁচ লাখ টন ধান সংগ্রহ করবে বলে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের থেকে তথ্য পাওয়া গেছে । পাশাপাশি আমদানি হবে দেড় লাখ টন ধান ও গম। এবার আমনের দাম কেজি প্রতি ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাজারে নতুন ধান এলে চালের দাম কমতে শুরু করবে।তাছাড়া বর্তমান সরকার খাদ্য নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। তাই দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়াতে এরই মধ্যে পণ্যটির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর প্রভাবও পড়বে দামে। এবার বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি বাজার পর্যায়ে কঠোর মনিটরিং রেখে চাউলের বাজার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে।