নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দশজন সাংবাদিকসহ ৫৭ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর ২০২৪) শ্রীমঙ্গল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি কথা বলা হলেও ঘটনার দিনে এরকম কিছু হয়নি বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী এই মামলার বাদী। এই মামলায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও আরটিভির মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী ভাস্কর হোমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ১১ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ও আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) বিতরণ করা হয়। তারেক জিয়ার পিপিই বিতরণ করায় ২১ জুন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে এম. ইদ্রিস আলীকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। পরে সভা ডেকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এরপর ইদ্রিস আলীকে শ্রীমঙ্গলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গত চার বছর ইদ্রিস আলীকে হত্যাচেষ্টা, মানহানি করায় মামলার আসামীরা জড়িত ছিলেন।
এহাজারে আরো উল্লেখ করা হয় ঘটনার দিন এক পর্যায়ে আসামীগণ এলোপাতারি ককটেলের বিস্ফোরন ঘটাইতে শুরু করে এবং, ১৭/১৯/২০/২১/৩৫নং আসামী তাহাদের সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়া এলোপাতারি ফাঁকা গুলি বর্ষন করে এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা সাক্ষীগণকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রেস ক্লাবের ভিতরে ককটেল বিষ্ফোরন ঘটায় এবং প্রেস ক্লাবের মূল ফটকে তালা মারার উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখিয়া আমি ও সাক্ষীগণ প্রেসক্লাবের পেসেইজের দরজা দিয়া পিছন দিকে পালাইয়া আত্মরক্ষা করি।
এই বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করতে ঘটনার পরের দিনের প্রকাশিত প্রত্যেকটি দৈনিক পত্রিকায় ককটেল বিস্ফোরণ কিংবা গুলাগুলির কোন তথ্য মেলেনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কলেজ রোডের প্রেসক্লাবের একাধিক বাসিন্দা বলেন, অই দিন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সত্য, কিন্তু সেদিন কোন ককটেল বিস্ফোরণ কিংবা গুলাগুলির ঘটনা ঘটে নি। এটি কাল্পনিক ভাবে মামলায় সাজানো হয়েছে।
মামলায় আসামী হওয়া সাংবাদিকেরা হলেন দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, দৈনিক যুগভেরী পত্রিকার প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন সোহেল, বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মামুন আহমেদ, সাপ্তাহিক চায়ের দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য সনেট দেব চৌধুরী, সাপ্তাহিক জয়যাত্রা পত্রিকার সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট আজাদুর রহমান, আরটিভির জেলা প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ভাস্কর হোম, একুশে টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার হৃদয় দাশ শুভ এবং দৈনিক বাংলার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এস কে দাশ সুমন।
মামলার বাদী ইদ্রিস আলী বলেন, আমার ওপরে অনেক অন্যায় করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় আমি কোনো বিচার পাইনি। এখন যেহেতু বিচারব্যবস্থা ঠিক হয়েছে, তাই আমি মামলা করেছি।’
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইদ্রিস আলীর মামলা রেকর্ড করেছি। এই ঘটনায় একজন আটক হয়েছে। বাকিরা পলাতক।’
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বলেন, মামলায় সাংবাদিকদের নামে ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা। সাংবাদিকদের বিগত সরকারের দোসর হিসাবে তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন। যা ভিত্তিহীন। শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ -৬ এর ধারা-৫ সুস্পষ্টভাবে লংঘন করায় তাকে কারনদর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি জবাব দিয়েছেন। তার দেওয়া জবাবেও তিনি একটি রাজনৈতিক দলকে হল বরাদ্দ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলকে হল বরাদ্দ দেওয়া যায় না।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে প্রেসক্লাবের সামনে গোলাগুলি, ককটেলের বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি একেবারেই অসত্য। শুধু ওই তারিখে কেনো, আজ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সামনে এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা এলাকার মানেষকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী আরও বলেন, ৯০ এর গন অভ্যুত্থানের পরে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছি। ঢালাওভাবে আওয়ামী লীগের দোসর বলার আগে আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখা উচিৎ মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে যাচাই করে দেখেন অভিযোগকারীর সঙ্গে পতিত সরকারের স্থানীয় এমপি ও কৃষিমন্ত্রীর কী দহররম মহররম ছিলো।
এই ঘটনায় শ্রীমঙ্গলের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডের এক ব্যবসায়ী বলেন, মামলা হলে ঘটনা তদন্ত হয় জানতাম, এখন দেখছি পুলিশ মামলা হলেই গ্রেফতার শুরু করে দেয়। তাহলে উক্ত ঘটনা সত্য কিনা প্রমান হলো কিভাবে, আর পুলিশ তদন্তই বা করলো কখন কারা জড়িত আর কিভাবে জড়িত। তাহলে এটাই কি আইনের শাসন।