মোঃ তুষার আহমেদ:
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চৌবাড়ী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চুরি করে বই বিক্রি করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা আহ্বায়ক কমিটির অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম চৌধুরী টিক্কার বিরুদ্ধে। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুজন ছিল বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আগামী ৬ মাসের জন্য ছানোয়ার হোসেন স্বপনকে সভাপতি, হেদায়েতুল আলম চৌধুরী টিক্কাকে অভিভাবক সদস্য, স্বপন কুমারকে সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি ও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেনকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
কিছু দিন আগে এ কমিটি সভা আহ্বানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের পুরোনো বই নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বই বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।কিন্তু ইউএনওর এই নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কা। তিনি গত বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ে গুদামজাত করা পুরোনো বইয়ের কক্ষের তালা খুলে বস্তা ভর্তি করে চুরি করার সময় বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে টিক্কাসহ আরও দুইজন দৌড়ে পালিয়ে যান। এর আগেও অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কা শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করায় সব শিক্ষক পাঠদান থেকে বিরত থাকেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে রিফাত, ফাহিম, সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজন জানান, তারা বিদ্যালয় মাঠে খেলা শেষে মাঠেই আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বইয়ের গুদাম ঘর খুলে ভিতরে কিছু একটা করা হচ্ছে ভেবে তারা এগিয়ে গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিতরে থাকা অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কাসহ আরও দুইজন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
তারা জানান, আমরা পুরোনো বইয়ের গুদাম ঘর ভর্তি বই দেখেছিলাম। কিন্তু ঘটনার দিন দেখি গুদাম অর্ধেক হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর আগেও একাধিকবার বই চুরি করে বিক্রি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কা ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে হেদায়েতুল আলম টিক্কার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তোজাম্মেল হোসেন মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
চৌবাড়ী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ছানোয়ার হোসেন স্বপন জানান, গত বুধবার বিদ্যালয়ের পুরোনো গুদাম ঘর থেকে বই চুরি হচ্ছিল। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর সময় অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কাসহ আরও দুজনকে দেখতে পায়। যদিও অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কাসহ অভিযুক্ত তিনজনই মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে ফোন করেছেন। তিনি বিষয়টি দেখছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা জানান, বেশ কিছু দিন আগে সরকারি বিনামূল্যের পুরোনো বই নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় চৌবাড়ী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক কমিটি। বিষয়টি জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বই বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে বই চুরির ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আগামী রোববার অভিভাবক সদস্য হেদায়েতুল আলম টিক্কা ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তোজাম্মেল হোসেনকে ডাকা হয়েছে।