ঢাকাTuesday , 4 March 2025
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন আদালত
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. ইতিহাস
  10. কবিতা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুন
  14. খেলাধুলা
  15. চাকুরী

সীরাত সিরিজ (পর্ব – তিন )

দেশ চ্যানেল
March 4, 2025 9:24 am
Link Copied!

( পিতা আবদুল্লাহর ইন্তেকাল, দুধপান ও শৈশব)

মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।

◼️ পিতা আবদুল্লাহর ইন্তেকাল

রাসূল (ﷺ) এর তখনো জন্ম হয়নি, পিতা আবদুল্লাহকে তাঁর পিতা (রাসূল (ﷺ) এর দাদা) আবদুল মুত্তালিব মদিনা থেকে খেজুর নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। আবদুল্লাহ তখন পিতার নির্দেশে রাসূল (ﷺ) কে স্ত্রীগর্ভে রেখে মদিনায় যান।(১৬) ঘটনাক্রমে সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ফলে জন্মের আগেই নবিজির মাথার ওপর থেকে পিতৃছায়া উঠে যায়।

◼️ দুধপান ও শৈশব

রাসূল (ﷺ) এর জন্মের পর প্রথমে তাঁর সম্মানিত মা তাঁকে দুধপান করান। এর কিছুদিন পর করান আবু লাহাবের দাসী সুওয়াইবা। এরপর এই সৌভাগ্য অর্জন করেন হলিমাতুস সাদিয়া রা.।(১৭)

তখনকার আরবের সম্ভ্রান্ত লোকদের অভ্যাস ছিল, তারা তাদের নবজাতককে দুধপান করাতে পার্শ্ববর্তী গ্রামে পাঠিয়ে দিতেন। এর মাধ্যমে শিশুর দৈহিক স্বাস্থ্য ভালো থাকত এবং গ্রামের বিশুদ্ধ আরবি ভাষাও তারা সহজে রপ্ত করতে পারত। এ জন্য গ্রামের মহিলারা দুগ্ধপোষ্য শিশু নিতে প্রায়ই শহরে আসত।

রাসূল (ﷺ) এর দুধমা হালিমা সাদিয়া রা. বলেন, ‘আমি তায়েফ থেকে সাআদ গোত্রের মহিলাদের সঙ্গে দুগ্ধপোষ্য শিশু সংগ্রহের জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা দিই। সে বছর দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। তখন আমার কোলেও দুগ্ধপায়ী এক সন্তান ছিল। তবে আমরা বেশ দারিদ্র্যপীড়িত ছিলাম। অনাহারের ফলে আমার বুকে এতটুকু দুধ ছিল না যে, আমার কোলের শিশুটি তৃপ্তিতে পান করবে। ফলে শিশুটি সারা রাত ক্ষুধায় ছটফট করত; আর আমরা তার কারণে ঘুমোতে পারতাম না। সারাটি রাত বসে বসে কাটিয়ে দিতাম। আমাদের একটি উটনী ছিল; কিন্তু সেটিরও তখন দুধ ছিল না। এভাবে কষ্ট ও ক্ষুধায় আমরা দিন কাটাতাম। এতকিছুর পরও আমরা দুগ্ধপোষ্য শিশু নেওয়ার মনস্থ করি।

মক্কার উদ্দেশে রওনার সময় আমি যে গাধায় আরোহণ করি, সেটাও নিতান্ত দুর্বল ছিল। ফলে কাফেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিল না। এ জন্য সফরসঙ্গীরা আমাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করছিল। এভাবে অনেক কষ্টে একপর্যায়ে আমরা মক্কায় পৌঁছাই।

সেখানে পৌঁছার পর কাফেলার মহিলারা শিশু মুহাম্মাদকে দেখার পর যখন জানতে পারে, তিনি পিতৃহীন ইয়াতিম, তখন কেউ-ই তাঁকে নিতে চায়নি। কেননা, এ ধরনের শিশুকে দুধপান ও লালনপালনে তেমন কোনো পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

এভাবে একে একে মহিলারা চলে যেতে লাগল; আর হালিমার ভাগ্যাকাশে ঝলমল করে নববি কিরণ আলো ছড়ায়। এ সময় তাঁর বুকের দুধস্বল্পতাই তাঁর জন্য রহমত হয়ে আবির্ভূত হয়। কেননা, তাঁর বুকে দুধ কম থাকায় ইতিপূর্বে কেউ তাঁকে সন্তান দিতে রাজি হয়নি।

হালিমা বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে বললাম, এত কষ্টের সফরের পর খালি হাতে ফিরে যাওয়াটা ঠিক হবে না। এভাবে ফিরে যাওয়ার চেয়ে বরং এই ইয়াতিম শিশুকে নিয়ে যাওয়াই ভালো। আমার প্রস্তাবে স্বামীও সম্মত হলেন।’ এভাবে তাঁরা এই দুর্লভ রত্ন-ইয়াতিম শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন, যে রত্ন-আলোতে শুধু হালিমা- আমিনার ঘর নয়; বরং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পুরো পৃথিবী আলোকিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল।

আল্লাহ তাআলার রহমতে তখনই হালিমার ভাগ্য খুলে যায়। সৃষ্টির সেরা মানব, ভবিষ্যৎ-নবি মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর কোলে এসে গেলেন। এরপর বিশ্রামের জন্য তাঁবুতে এসে যখন শিশু মুহাম্মাদ (ﷺ) কে দুধ পান করাতে বসেন, তখন থেকেই বিভিন্ন বরকত প্রকাশ পেতে শুরু করে। ইতিপূর্বে তাঁর বুকে যেখানে দুধ-খরা চলছিল, সেখানে আজ শিশু মুহাম্মাদ (ﷺ) এর বরকতে এই পরিমাণ দুধ এল যে, রাসূল (ﷺ) ও তাঁর দুধভাই আবদুল্লাহ উভয়ে তৃপ্তির সঙ্গে উদর পূর্ণ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এদিকে উটনীর দিকে তাকিয়ে দেখা গেল, সেটিরও স্তন দুধে টইটম্বুর!

হালিমা বলেন, আমার স্বামী তখন উটের দুধ দোহন করেন এবং আমরা সবাই তৃপ্তির সঙ্গে তা পান করি। ফলে অনেক দিন পর সারা রাত আমরা অত্যন্ত আরামে ঘুমিয়ে কাটাই। এখন আমার স্বামীও আমাকে বলতে থাকেন, ‘হালিমা, তুমি তো বড় বরকতময় এক শিশু নিয়ে এসেছ!’ আমি বলি, আমারও তা-ই মনে হচ্ছে। এ শিশু বরকতপূর্ণ এক শিশু।

এর পর আমরা মক্কা থেকে রওনা দিই। আমি মুহাম্মাদকে নিয়ে সেই গাধায় চড়ি, যেটি আসার সময় চলতে পারছিল না; কিন্তু এবার আল্লাহর কুদরতের খেলা প্রত্যক্ষ করলাম। সেই দুর্বল গাধাটিই ফেরার পথে এত জোরে চলতে লাগল যে, কাফেলার অন্য কারও বাহন এটির ধারেকাছেও আসতে পারছিল না। ফলে আমার সাথি মহিলারা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলতে থাকে, ‘এটা কি সেই গাধা, যেটিতে চড়ে তোমরা এসেছিলে?’

এভাবে বরকত ও কুদরতের খেলা দেখতে দেখতে একসময় সফর সমাপ্ত হলো। তায়েফ থেকে মক্কা হয়ে আবারও তায়েফে নিজ নিজ বাড়িতে এলাম সবাই। তায়েফে তখনো দুর্ভিক্ষ চলছিল। দুধের পশুগুলো ছিল দুধশূন্য; কিন্তু আমরা বাড়িতে ফিরতেই আমাদের বকরিগুলোর স্তন দুধে ভরে ওঠে। এখন প্রতিদিনই আমাদের বকরিগুলো মাঠ থেকে দুধভরা স্তনে ফেরে; কিন্তু আশেপাশের অন্য কারও পশুর স্তনে একফোঁটা দুধের দেখা নেই। এ দৃশ্য দেখে আমার গোত্রের লোকেরা তাদের রাখালদের বলতে লাগল, তোমরাও পশুগুলো নিয়ে সেখানে চরাও, যেখানে হালিমার বকরিগুলো চরানো হয়।

মাঠের কোনো বিশেষত্ব ছিল না; বরং এই বরকত-খেলার মাধ্যমে এখানে অন্য এক রত্নের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া ছিল উদ্দেশ্য। তারা সেই রত্ন পাবে কোথায়? ফলে একই মাঠে চরার পরেও দেখা যায়, তাদের পশুগুলো দুধশূন্য আর আমারগুলো দুধপূর্ণ!

এভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত নবিজি (ﷺ) এর বরকত প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। দেখতে দেখতেই দু-বছর পেরিয়ে যায়, এরপর শিশু মুহাম্মাদকে আমি বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিই।

টীকা:

(১৬) এক বর্ণনায় রয়েছে, নবিজি (ﷺ) এর জন্মের সাত মাস পর তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইনতিকাল করেন। যদিও জাদুল মাআদে ইবনুল কাইয়িম রাহ, এ মতকে দুর্বল বলেছেন।

(১৭) সিরাতে মুগলাই : ৭

 

লেখা :

বই – সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া ﷺ ; পৃষ্ঠা : ২১-২৪

লেখক : মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)

অনুবাদক : ইলিয়াস মশহুদ

চলবে ইনশাআল্লাহ …

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

Design & Developed by: BD IT HOST