বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
তৎকালীন শাসক পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে শুধুই ইতিহাস।
তবে হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের নিপীড়ন নির্যাতন একনায়কতন্ত্র সকল ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার সব মিলে দেশকে এক ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছিল,
আর সেই স্বৈরাচার হাসিনার অন্ধকার জগতের জুলুম নির্যাতনের রাহু গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে আরেকটি স্বাধীনতা ও বিজয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট ওই শকুনের থাবা থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় আরেকটি নতুন ইতিহাস, ফলে সমগ্র জাতি স্বগৌরবে আলিঙ্গন করে নেয় বদলে যাওয়ার নতুন দিন আর অবিস্মরণীয় এই দিনটিকে
সারাবিশ্বের মানুষ অবাক বিষ্ময়ে দেখেছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবল কর্তৃত্বপরায়ণ এক শাসকের দেশ ছেড়ে পলায়নের দৃশ্য।
হাজারো প্রাণের আত্মত্যাগের সেই অভ্যুত্থানের একবছর পূর্ণ হলো আজ।
দিনটিকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে। তাই দিবসটিকে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সরকারিভাবে সাধারণ ছুটি যা বহাল থাকবে আজীবন কাল।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে খুলনায় সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে । কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পুষ্প স্তবক অর্পণ, উন্মুক্ত আলোচনা সভা,গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন, মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা। তাছাড়া খুলনা জেলা প্রশাসক দিবস টি উপলক্ষে আজ সকাল ৯ টায় নগরের শিববাড়ি মোড়ে নির্মীয়মান শহীদ জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেছেন।
তাছাড়া সুবিধামতন সময়ে মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগডাও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নগরীর শিববাড়ি মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শহীদ হাদিস পার্ক, জোড়া গেট, গল্লামারি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা রুপসা মোর, নতুন রাস্তা সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া বিকাল তিনটায় নগরী শিববাড়ি মরে শহীদ পরিবারের সদস্য আহত ছাত্র জনতা জুলাই যোদ্ধা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে সংবর্ধনা জুলাই স্মৃতিচারণ উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে খুলনা সিটি কর্পোরেশন দিবস টি উপলক্ষে নগর ভবনে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুইজ প্রতিযোগিতা সাথে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া সরকার,তথা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া রাজনৈতিক দলের প্রধানরাও শুভেচ্ছা বানী দিয়েছেন।
এ সময় বিভিন্ন বক্তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন যেভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা হন প্রধানমন্ত্রী। সাড়ে ১৫ বছরের টানা ক্ষমতায় তিনিই চরম কর্তৃত্ববাদী শাসকে রূপ নেন। সমালোচকদের কাছে তিনি ভিন্নমত দমনকারী, একদলীয় শাসনকারী ফ্যাসিস্ট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতের ভোটের পরও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন সরকারকে চাপে ফেলতে না পারায় আওয়ামী লীগের শাসন দিনেদিনে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের একক অর্জন– এ বয়ান আরোপ হয় সর্বত্র। রাজনৈতিক বিরোধীদের জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধী তকমা দিয়ে নির্মমভাবে দমন করা হয়। বিরোধী দলগুলোকে দেশবিরোধী চিত্রিত করে বিএনপি, জামায়াতকে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও ক্ষমতাসীনদের হামলা ও পুলিশের কঠোরতায় দমন করতে সক্ষম হলেও অবশেষে ২৪ এর জুলাই যোদ্ধাদের কাছে পরাস্ত হয়ে দেশ ছেড়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়।