নজরুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি:
১৯৭১ সালে নিজের জীবনবাজি রেখে মাতৃভূমিকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানির নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিলেও’৫২ বছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি মৃত সুজাবত আলীর পরিবার। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার মধ্য ভদ্রঘাট (নাটাপাড়া) গ্রামের মৃত্যু সুজাবত আলীর মেয়ে লাভলী খাতুন। পিতার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে সরকারের বিভিন্ন মহলে ধর্না দিচ্ছেন কিন্তু এখনো তা আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে ২৫ মার্চের পরে খুলনা সোনালী জুট মিলে চাকুরীরত থাকা অবস্থায় কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানির নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এরপর যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে ট্রেনিং করেন। প্রায় ১ মাস পরে বাড়ি ফিরে পাবনা ৭নং সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টরের আঞ্চলিক ভিত্তিক গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনী পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে (মির্জা বাহিনী) যোগদান করেন। এরপর পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে কামারখন্দের ভদ্রঘাট ও নওগাঁর বিভিন্ন রনাঙ্গনে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। কন্যা লাভলী খাতুন বলেন,
আমার পিতা যুদ্ধ শেষ করে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় এনে আবার ১০ই জানুয়ারিতে দীর্ঘ ৯ মাস পর খুলনা সেনালী জুট মিলে যোগদান করেন। সেখানেও তিনি দেশী দালাল ও বিহারী নিধন করেন। এরই এক পর্যায়ে চাকুরীরত অবস্থায় মিলের শ্রমিকদের বিল নিয়ে আসার পথে তার বুঝে ওঠার আগেই ট্রেন ডাকাতিতে সুটকেসে টাকাসহ যুদ্ধের কিছু কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় ডাকাত দল। পরে স্থানীয় কিছু লোক তাকে বাসায় পৌছে দিয়ে যায়। এর তিন দিন পর তার জ্ঞান ফেরে। তারপর ১৯৮০ সালে রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তার প্রাণনাশের হুমকী থাকায় ওই বছরের ৮সেপ্টেম্বর চাকুরী থেকে ইস্তেফা দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু বাড়ি চলে আসার পর সাংসারিক অবস্থা খারাপ থাকায় ও বাবার অসুস্থ্যতার কারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম আছে কিনা জানতে পারেন নাই। পরবর্তীতে অসুস্থ্য অবস্থায় ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ব্রেইন স্ট্রোকে তিনি মৃত্যুবরন করেন। তবে বাবার মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে যেন স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জন্য আমি তার মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বাবার স্বীকৃতি চাই। ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক খাঁন বলেন, সুজাবত আলী ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবধান রেখেছিলেন৷ কিন্তু যুদ্ধের ৫২ বছরেও তিনি স্বীকৃতি পায়নি। এটা সত্যিই দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, সুজাবত আলী আমার পরিচিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি ৭নং সেক্টরের অধিনে যুদ্ধ করলেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই। তবে তার পরিবারের আকুতির বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক সুজাবত আলীর নামটি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে আশা করছি।