আবু তালহা রাফি, হাটহাজারী উপজেলা প্রতিনিধি
আজ ৮ই সেপ্টেম্বর, রবিবার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এর সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্র সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ অডিটোরিয়ামে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচনা ছিল ছাত্র রাজনীতি নিয়ে।
প্রথমেই কথা বলেন সমন্বয়ক- সহ সমন্বয়ক নিয়ে, তিনি বলেন,‘ বিজয় লাভের পূর্ব সময়ে কাউকে সমন্বয়ক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলে বেশিরভাগ না করে দিতো, আজ তারা অনেকেই সমন্বয়ক- সহ সমন্বয়ক নিয়ে বেশি উদ্ধিগ্নতা প্রকাশ করে। আমি নিজে কখনো কোন পোস্টে সমন্বয়ক শব্দটা ব্যবহার করি না।’
এরপরে কথা বলেন বিদ্যমান ছাত্র রাজনীতি নিয়ে, তিনি বলেন,‘ বিগত সময়ে ছাত্র রাজনীতির কারণে নিজের মেরুদণ্ড বিক্রি করে দিতে হয়, বাক স্বাধীনতা বিনষ্ট করতে হয়, হলে একটি সীটের জন্য নিয়মিত গেস্ট রুমে যেতে হয়, শিক্ষকদের ভাগ-বাঁটোয়ারায় সমস্যা হলে প্রশাসনের কাজ বন্ধ হয়ে যেতো এতে আমাদের ভোগান্তির স্বীকার হতে হতো। এই ছাত্র রাজনীতি আমাদের কিছুই দেয় নি, বরং অনেক কিছু নিয়েছে।’
ছাত্র রাজনীতি আসলেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি না সে বিষয়ে তিনি বলেন,‘ছাত্র রাজনীতি থাকলে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আমরা সেভাবে সোচ্চার হতে পারবো না, রাজনীতি না থাকলে যে ফাকা জায়গা তৈরি হবে সেটি আবার ফ্যাসিস্টের হাতে চলে যাবে, তাই স্বাধীনতাকে ধারণ করার জন্য ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন তবে সেটা কোন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি হওয়া যাবে না। এজন্য ছাত্র রাজনীতিতে প্যারাডাইম শিফট নিয়ে আসতে হবে অর্থাৎ বিদ্যমান মতবাদ থেকে নতুন মতবাদে শিফট করতে হবে।’
দেশের ক্রান্তিলগ্নে সবাই যেভাবে একত্রিত ছিলাম, দেশ পুনর্গঠনের সময় আমাদের একত্রিত থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে কথা বলেন কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, তিনি বলেন:‘ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যরা শিক্ষক নিয়োগে এতোটাই দলীয়করণ করেছে যে যারা উপাচার্য হওয়ার আবেদন করেন তারা কোন না কোনভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত। অরাজনৈতিক এবং যোগ্য শিক্ষক এখনো পাওয়া যায় নি।’
বিপ্লব পরবর্তীতে শহিদ পরিবার ও আহতদের বিষয়ে সমন্বয়করা কি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে কথা বলেন চবির সমন্বয়ক মাহফুজ, তিনি বলেন: ‘চট্টগ্রামে ৮জন শহিদ হয়েছে এর মধ্যে ৫জনের পরিবারকে চাকুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রত্যেক পরিবারকে ১লক্ষ টাকা করে এককালীন অর্থ সাহায্য করা হয়েছে ওশহিদ পরিবারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত ৪০০ জন আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২জন শিক্ষার্থী শহিদ হয়েছেন তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শহিদ ভাইদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ ও তাদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে কথা হয়েছে, প্রশাসন আসলে সেটি কার্যকর করা হবে।’
৫ই আগষ্টের বিপ্লবে কওমী মাদ্রাসার অবদান নিয়ে বক্তব্য রাখেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জুনাইদ, তিনি বলেন:‘ গণ অভ্যুত্থানে ৮০ জন মাদ্রাসা ছাত্র শহিদ হয়েছে কিন্তু মিডিয়ায় সেটা প্রকাশ করা হয় না। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বলে আমাদেরকে মাইনাস করা হয় এটা দূর করতে হবে, আমাদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ করেন এবং ক্যাম্পাস ও রাষ্ট্র গঠনে তাদের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেন।