জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
দুর থেকে মনে হবে মিটিমিটি জ্বলছে জোনাকির আলো। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইট আর নিচে সবুজ সারি সারি ড্রাগন গাছ । মনে হবে যেন আঁধার রাতে আলো আর সবুজের মিলনমেলা।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কোটচাঁদপুর-গান্না রাস্তার পাশেই একটি ড্রাগন বাগানের দৃশ্যটি চোখে পড়ে। বেশি ফলনের আশায় এমনই পরিবেশ তৈরি করেছেন কোটচাঁদপুরের ড্রাগন চাষি রেহমান উল করিম রাজু।
এদিকে ড্রাগন বাগানের সৌন্দর্য্য দেখতে রাতে ভিড় করছেন রাস্তার পথচারী অনেকেই ।
জানা গেছে, রেহমান উল করিম রাজু প্রায় ৩ বছর আগে কোটচাঁদপুরে ১০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন ড্রাগন বাগান। এখানে ২৫ হাজার গাছে প্রতি সিজনে ফলনের হিসাব সঠিক পরিমাপ নাই। তারপরও তিনি লাভবান বলে জানান ।
এ বাগানটিতে প্রতিদিন ৭-৮জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে আমি দেড় বিঘা জমিতে ৫৫০ পিচ বিশেষ ধরনের লাইট ঝুলিয়ে রাতে শুরু হয়েছে ড্রাগন বাগানের পরিচর্যা। ১০ বিঘা ড্রাগন বাগানের মধ্য হতে পরিক্ষা মূলক দেড় বিঘা জমিতে দিনের আলোর পরিধি বাড়াতে এ বিশেষ লাইটিং। যাতে সুতা, বাঁশ, তার এবং লাইটসহ খরচ হয়েছে তিন লক্ষ টাকার মত।
দর্শনার্থী শামীম আহমেদ জানান, ড্রাগন বাগান দেখতে আসার পর অনেক ভালো লাগলো। এই অঞ্চলে এটাই প্রথম লাইটিং ড্রাগন বাগান। চাষ পদ্ধতি অনেক অত্যাধুনিক। এই বাগানকে ঘিরে এই জায়গা আরও অনেক উন্নত হবে বলে মনে করেন তিনি।
দর্শনার্থী কামরুল হাসান জুয়েল জানান, এমন সৌন্দর্য সত্যিই আমি আগে দেখিনি। বন্ধুদের থেকে শোনার পর এসেছি, দেখার পরে অনেক অভিভূত হয়েছি।
বাগানের কর্মচারী মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, যে সময় ড্রাগন বাগানে কোনো কাজই থাকে না ঠিক সেই অসময়ে এমন প্রযুক্তি সত্যিই অভিনব ঘটনা। এর আগে কখনো এমন বাগানে কাজ করি নাই। এই বাগানে নিয়মিত ৭-৮ জন কাজ করি। সারারাত একজন নাইট গার্ড বাগান পাহারা দেয়। যখন ফুল ফুটবে তখন রাতেও ফুলগুলোতে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করতে হবে বলে জানান।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের ড্রাগণ চাষী মোঃ রেহমান উল করিম রাজু বলেন, ইউটিউব দেখেই মূলত এ পদ্ধতির খবর জেনেছি । তারপর ড্রাগন চাষ শুরু করলাম। প্রাথমিকভাবে বড় অংকের টাকা লাগলেও লাভবান হবো আশা করছি । প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর হতে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত লাইটগুলো জ্বলে। শীতকালে দিন ছোট হয় তাই দিনের আলো কম হয় । ড্রাগন বেড়ে ওঠে মূলত দিনের আলোয়, তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।
কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান বলেন, বিগত এক বছরের ব্যবধানে কোটচাঁদপুরে ব্যাপকভাবে ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকেরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই চাষ করছে। কোটচাঁদপুরে প্রথম লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ শুরু করেছে। এটা একটা নতুন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষ করা অনেক ব্যয়বহুল। এইভাবে চাষ যে কেউ করতে পারবে না। তবে তাদের দেখা দেখি যদি এই প্রদ্ধতিতে কেউ চাষ করতে চাইলে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করতে পারে। যখন তারা লাভবান হবে, তখন বেশি পরিসরে এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করতে পারবে।