বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো:
সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে খুলনা বিভাগে দগ্ধ তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে সাথে ভ্যাপসা গরম আর দগ্ধিত তাপাদাহ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার দুঃসংবাদের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে।
আবহাওয়া এতটাই বেশি প্রখর উত্তপ্ত উগ্ররূপ ধারণ করেছে যে কোথাও একটু বাতাস নাই উত্তপ্ত দাবাদহ ভ্যাসা গরমে পুড়ছে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ খুলনা হাসফাস করছে মানুষ তেঁতে উঠেছে প্রাণীকূল রোদের তাপে গলছে সড়কের পিঁচ খাল বিল মাঠ ফেটে চৌচির আর কাঠফাঁটা প্রখর রোদ্রের উত্তপ্ত গাত্রদহে খাল ও নদীর পানিতে গবাদি পশু গরু মহিষ এমন কি কুকুর পর্যন্ত শরীর ভিজিয়ে একটু স্বস্তি খুঁজছে । এদিকে অন্যান্য প্রাণীকুল পানির অভাবে রয়েছে মৃত্যু হুমকির মুখে অপরদিকে অস্বাভাবিক গরমের প্রভাবে নগরীর অধিকাংশ সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হচ্ছে হিট স্ট্রোক পানি শূন্যতা পাতলা পায়খানা জ্বর আমাশা কাশি নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট ও দাস্তো রোগী আর অধিক গরমে সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ব্লাড প্রেসার হাই প্রেসার ওজন ভারি মানুষেরা সাথে শিশুরাও রয়েছে ঝুঁকিতে প্রতিনিয়ত এই শ্রেণীর মানুষেরাই ভর্তি হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে। ফলে হাসপাতাল গুলোতে রোগীধারণের তিল পরিমানে ঠাঁই নাই।
আর এ সকল রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আবার অপরদিকে সুযোগ বুঝে দাম বেড়েছে স্যালাইনের এবং সংকট দেখা দিয়েছে গরম জনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের। সাথে পাল্লা দিয়ে দাম হাঁকিয়ে দুই থেকে তিন গুণ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডাব ও ঠান্ডা জাতীয় ফল।
তবে ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে অসহ্য প্রখর রোদ্রের উত্তাপ সাথে গরমের উত্তপ্ত ক্রমান্বয় বেড়েই চলেছে তার মধ্য মরার উপর খরার ঘা বৈদ্যুতিক লোডশেডিং তো রয়েছেই মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসলেও বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস শরীরে অনুভবই হয় না সারারাত গরমে ছটফট করতে হয় ঘুম আসে না পাশাপাশি মশার উপদ্রব কোন অংশেই কম না। এদিকে আবার দেশজুড়ে অধিক গরমের কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বন্ধের সাথে আরো সাত দিন দীর্ঘ সময় টেনে দিয়ে ছুটি বাড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অপর দিকে আবার আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ এমন কি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে দেশের বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টিও কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তাপমাত্রা কমছে না সবকিছু মিলে জনজীবন একেবারেই অতিষ্ঠ অসহ্য গরম আর রোদের উত্তাপে দগ্ধিত হয়ে উপার্জন করতে পারছে না রিক্সাওয়ালা ও দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষেরা পর্যাপ্ত গরম ঘাম আর প্রখর রৌদ্রের তাপে একাকার হয়ে এ সকল মানুষেরা সামান্য পরিশ্রম করেই কেউ নদীর পারে আবার কেউ গাছের ছায়া খুজে ক্লান্ত হয়ে হাপাচ্ছে ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের ।
এদিকে গরমের উত্তাপে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বেরুতেই সাহস পাচ্ছে না ফলে রাস্তাঘাট হাঁট বাজার মার্কেট শপিংমল ও অন্যান্য জায়গায় জনসমাগম খুবই কম পাশাপাশি রোদ্রের উত্তাপে গাছপালা ও সবুজ বনায়ন শুকিয়ে নেতিয়ে পড়েছে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে খুলনা বিভাগে তবে ১০ জেলার সব থেকে বেশি তাপমাত্রা বইছে চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশব্যাপী মাইকিং করে তিন দিনের হিট এলার্ট জারি করে সাধারণ মানুষদের ছায়াস্থানে থাকতে এবং বেশি বেশি পানি খাবার স্যালাইন তরল জাতীয় খাবার ও ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তারা । আবার এরই মধ্যো গেল একশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাসের আগাম বার্তা দিয়ে দুঃসংবাদ জানিয়েছেন দেশের জৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদরা।
তারই ধারাবাহিকতায় খুলনা বিভাগীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেছেন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশ বছরের সকল ধরনের আবহাওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি প্রতিকূল অবস্থার রয়েছে একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে অধিক উষ্ণতা অপরদিকে সবুজ বনাঞ্চলের প্রাচীন আমলের বৃক্ষনিধন দিন দিন মাঠঘাট সবুজ হারিয়ে গড়ে উঠছে বহুতল বিশিষ্ট বাড়িঘর এবং অসংখ্য শিল্পকল কারখানা ফলে গ্রীষ্মের রোদ্রু ঠেকিয়ে ছায়া দানকারী বৃক্ষ উজার হয়ে গেছে অসৎ ব্যবসায়ীদের গ্রাসে।
ফলে দিন দিন আবহাওয়ার প্রতিকূল উত্তপ্ত বৈরী আচরণ ঝড়ঝঞ্জা জলোচ্ছ্বাস অনাবৃষ্টি খড়া এবং ঋতু পরিবর্তনের বাধা সৃষ্টি লেগেই থাকবে। আর এ সকল প্রতিকূলতার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে পরিকল্পনামাফিক দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে এবং বিলীন হয়ে যাওয়া নদী খাল ও হাওর খনন করে পানি সরবরাহর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে তা না হলে রবি শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে অশনি সংকেত বয়ে আসবে। এর ফলে দেশ পড়বে খাদ্য সংকটে সরকার হারাবে রাজস্ব।