আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু টাঙ্গাইলঃ
টাঙ্গাইলে সকল সরকারি নিয়মনীতি ও প্রশাসনের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে প্রকাশ হলো সরকারি শিক্ষকদের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি -২০২৩খ্রিঃ’ নামে আলোচিত ও অবৈধ বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল। অথচ সরকারি সিদ্ধান্ত ও চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করে গোল্ড মেডেল প্রদানের নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের আয়োজনে গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৃত্তি পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত সকল সরকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিলেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ২০নভেম্বর ফলাফল প্রকাশের পর কতিপয় বেপরোয়া সরকারি শিক্ষকের লক্ষ লক্ষ টাকা বৃত্তি বানিজ্য থামাতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য যে, টাঙ্গাইলে সরকারি নিময়নীতির তোয়াক্কা নাকরে গত ৪নভেম্বর ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি -২০২৩খ্রিঃ’ নামে কতিপয় সরকারি শিক্ষক বেসরকারি ভাবে ঐ বিতর্কিত বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। এই বৃত্তি আয়োজনের মাধ্যমে ঐ সকল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। অথচ, নোট-গাইড আর কোচিং নির্ভর পড়াশোনা বন্ধ করতে এবং প্রতিদিন ক্লাসেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে গত ৮ আগস্ট সচিবালের অনুষ্ঠিত শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় সরকারি ভাবে এবছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারি বৃত্তি বাতিলের এই সুযোগে টাঙ্গাইলের কতিপয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সরকারি চাকরি বিধিমালা অমান্য করে গোল্ড মেডেল প্রদানের নামে অনুমোদনবিহীন এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। বৃত্তি পরীক্ষা বাবদ এরা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত জেলার প্রায় আট হাজারের অধিক কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে জন প্রতি ১৫০/(একশত পঞ্চাশ টাকা) করে ফি আদায় করে। এই হিসেবে গোল্ড মেডেল বৃত্তি আয়োজক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের উপার্জন হয়েছে প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা। অথচ,’সরকারি চাকুরি বিধিমালা ১৭(১) নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনও সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনও ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না। অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনও কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’ সরকারি অনুমোদন ব্যতিত সরকারি চাকুরীজীবি শিক্ষকদের এ ধরনের অর্থ উত্তোলন ও বৃত্তি প্রদানের নামে ব্যবসাবানিজ্য সম্পূর্ণ বেআইনি।’
সরকারি শিক্ষকদের আয়োজনে বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন ও পরীক্ষা ফি বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন বিষয়ে সে সময় প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বনিক জানেয়েছিলেন, ‘নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে যে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি পরীক্ষার সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বাসাইলের বার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এভাবে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করাটা আমাদের ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর হবে না।’ অথচ, ইতিপূর্বে নিউজ মিডিয়ার কাছে ভুল স্বীকার করা ঐ আত্নস্বীকৃত ক্ষমা প্রার্থনাকারী মনির হোসেন খান গত ২০নভেম্বর এই বিতর্কিত বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে উল্লাস প্রকাশ করে নিজ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে।
গত ৪নভেম্বর সরকারি অনুমোদনহীন ঐ বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের আগে ও পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুনমোদিত ফি আদায় করে বৃত্তি বানিজ্যের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের কতিপয় অসাধু সরকারি শিক্ষকের লক্ষ লক্ষ টাকা বিকল্প উপার্জন বিষয়ে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পরও কেন এসকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড থামানো যাচ্ছে না, এ বিষয়ে সরকারি উর্ধ্বতন প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।