জিয়া চৌধুরী (খুলনা জেলা প্রতিনিধি)
দেবী দুর্গা আজ কৈলাশে ফিরে যাবেন। তাই ভক্তদের মনে দুঃখ। তবে তাদের কষ্ট লাঘব করতে আগামী বছর আবার আসবেন দেবীদুর্গা। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য ভক্তরা মত্ত হয়েছেন সিঁদুর খেলায়। রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর দৌলতপুরস্হ পাবলা সার্বজনীন কালীবাড়ী মন্দির, পাবলা বণিকপাড়া গাছতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, পাবলা বণিকপাড়া জয় মা রাধা বিনোদিনী সার্বজনীন পূজা মন্দির, পাবলা বণিকপাড়া মাতৃ মন্দির, আঞ্জুমান রোডস্থ দৌলতপুর ঋষি পাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, দেয়ানা দাসপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, পাবলা মধ্যপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির,পাবলা সাহাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, সরকারি বি,এল,কলেজ পূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা কালীবাড়ী পূজা ও মন্দির উন্নয়ন কমিটি,মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা উওর বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা মজুমদার পাড়া সার্বজনীন চন্ডী মন্দির,মহেশ্বরপাশা ঘোষপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা সাহাপাড়া শ্রী শ্রী শীতলা মায়ের মন্দির, মহেশ্বরপাশা ঋষিপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা ঋষিপাড়া দূর্গাপূজা মন্দির, মহেশ্বরপাশা সেনপাড়া সার্বজনীন পূজা উদয়াপন পরিষদ, মহেশ্বরপাশা ( মল্লিকপাড়া) সার্বজনীন জোড়া মন্দির সমূহে ভক্তরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
দুর্গাপূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ ‘ এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দেবীকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। এই সিঁদুর মাখার রীতি অনেক সময় দশমী ঘরে পালন করা হলেও অনেকে আবার নিজেদের ঘরেই খেলে থাকেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে থাকেন, নাচ, গান করেন, যেন সারাটা বছর এমন আনন্দেই কাটে তাদের দিন।
স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সঙ্গে করে শাঁখা-সিঁদু নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা। এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সবাই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।
মায়ের চরণে সিঁদুর দিতে আসা দীপ্তি দাস বলেন, বিয়ে ছাড়া মাথায় সিঁদুর দেওয়া যায় না। আমাদের একদিন বিয়ে হবে তখন ভালো স্বামী এবং সুখের সংসারের কামনায় আমরা সিঁদুর খেলায় আসি। বিয়ে হলে আমরাও সিঁথিতে সিঁদুর পরবো।’
সিঁদুর খেলতে আসা অপর এক নারী হৈমন্তি রানী বলেন, স্বামীর মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করি। তার পায়ে সিঁদুর ছুঁয়ে দিয়ে তার কিছুটা সিঁথিতে লাগালে সংসারে মঙ্গল হয়।’
উল্লেখ্য, মহালয়া থেকে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আসার ঘণ্টা বাজে। ষষ্ঠীতে তিনি ভক্তদের মাঝে অধিষ্ঠিত হন। আর দশমীতে তিনি কৈলাশে চলে যান। গতকাল বিজয়া দশমীর পূজা শেষ হলেও আজ হবে প্রতিমা বিসর্জন। দুর্গা মায়ের বিদায়ের দিন। ঘোড়ায় চড়ে দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন।
জানা গেছে, দৌলতপুরের ১৯ টি মন্দিরের দূর্গা প্রতিমা গুলো দৌলতপুর কবিরাজ ঘাটে ৭ টি, রেলিগেট নগর ঘাটে ৫ টি, বিএল কলেজ ঘাটে ১ টি, টিবি হাসপাতাল ঘাটে ১ টি,পুকুরে ৩ টি পূজা বিসর্জন দেওয়া হবে ও ২ টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ পূজা উদয়াপন পরিষদ, দৌলতপুর থানা শাখার সভাপতি তিলোক গোস্বামী বলেন, উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হওয়া দুর্গা দেবীর পূজার অনুষ্ঠান সমূহ আজ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে। আজ (১৩ অক্টোবর) বিকাল ৪ টার দৌলতপুরের ১৯ টি মন্দিরের মধ্যেও দুইটি ব্যতীত অন্যান্য প্রতিমা গুলো নির্ধারিত স্থানে বিসর্জন দেয়া হবে। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস ভক্তদের কষ্ট দূর করতে আসছে বছর আবার আসবেন মা দেবী দুর্গা।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলী জানান, সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজাকে ঘিরে দৌলতপুর থানাধীন এলাকার মন্দির সমূহে নিরাপত্তার রক্ষার্থে পুলিশ মোতায়নসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ (১৩ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের দিনেও দৌলতপুর থানা পুলিশ শান্তির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা স্বার্থে সর্বাত্মক কঠোর অবস্থানে থাকবে।