বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
বোধন ষষ্ঠী পূজা সমাপ্তির পর
আজ পঞ্জিকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা ৫৫ মিনিটে পুরোহীতগন প্রস্তুুত শারদীয় দুর্গা পূজায় মৃন্ময়ী মা দেবী দুর্গার নবপত্রিকা স্থাপন সম্পাদনের লক্ষ্যে মন্ত্র পাঠ পুষ্প নিবেদন ঘন্টা বাদ্যি শঙ্খ ধ্বনি বাজিয়ে ধুপ ধুনোর আরতী করে মায়ের চক্ষু উন্মোচন এর মাধ্যমে দেবী কে মন্দিরের আসনে আহবান করা হয়েছে।
এ সময় মায়ের ভক্তদের আগমনের মুখরতায় এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ।
এ সময় প্রত্যক ভক্ত মায়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছে সাধ্য অনুযায়ী ফল পুষ্প ও নানান নৈবেদ্য সামগ্রী। মায়ের শ্রী চরণে মহা সপ্তমী পূজার পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে প্রতিটি ভক্ত মা দেবী দুর্গার নিকট আর্তনাদ জানিয়েছেন পৃথিবীর যত আসুরিক অপশক্তি আছে তুমি তাদের বিনাশ করো মা। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করো। ভক্ত হৃদয় অবস্থান করো। এবং এই বিশ্বচড়াচরের সকল মানুষ এর মনের অশান্তি বিনাশ করে তুমি শান্তির অন্বেষণের সন্ধান দাও। তুমি বিপদ পরিত্রাণী মা তুমি বিপদ থেকে জগতের সকল প্রাণীকূল রক্ষা কর।
এই প্রার্থনার মাধ্যমে ভক্তরা মা দেবী দুর্গার শ্রী চরণে মহা সপ্তমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেছেন । এবং অঞ্জলি শেষে উপস্থিত ভক্তদের মাঝে মায়ের প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে সপ্তমী পূজার তাৎপর্য তুলে ধরে নগরীর আর্য্য ধর্মসভা মন্দিরের পুরোহিত বলেন সপ্তমী পূজার মূল উদ্দেশ্য হল প্রাণ প্রতিষ্ঠা মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি চিন্ময় হন।
তাছাড়া প্রাণ আসে কোথা থেকে। একটা প্রদীপ থেকে যখন আরেকটা প্রদীপ জ্বালানো হয় তখন প্রথম প্রদীপটা নিভে যায় না।
আমাদের অন্তরের যে প্রাণের প্রদীপ নিত্য জ্বলছে তা দিয়ে মায়ের মূর্তিকে প্রাণবন্তর করে তুলবো।
এভাবেই যখন বিশ্বব্যাপী প্রাণ সম্পর্কে দ্বিতীয় স্তরে আমরা সচেতন হই তখনই মহাসপ্তমী ঘনীভূত করে মূর্তিতে প্রতিষ্ঠিত দেওয়া হয় এবং মাতৃমূর্তি প্রাণবন্তর হয়ে ওঠেন।
এবং একজন সুচিত্রবান লোক যেমন যেখানে উপস্থিত হন তার প্রভাব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সেই রকম আমাদের পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় দ্বারা যে ব্যক্তিত্ব ছড়িয়ে পড়ে অথবা একটা গোলাপ ফুল তার আকর কিন্তু একটা ফুলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি বিশ্বমাতা বিশ্ব জননী পূজোর আসরে আছেন তখন তার প্রভাব থাকে ত্রিলোকে এই হল প্রাণ প্রতিষ্ঠা বা সপ্তমী।
এবং বোধনের সময় ত্রিপতি জ্ঞানে প্রতীক বিশ্ব বৃক্ষ থেকে সপ্তমীতে নবপত্রিকার সঞ্চার ঘটে। এই নয় টি গাছ জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান এবং ঔষধিগুণ বর্তমান এই নবপত্রিকা থেকে ঘটে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। এবং সবশেষে মূর্তি প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়।
এভাবে এক অখন্ড চৈতন্য থেকে প্রাণ অন্তরের মেলায় বিল্ব বৃক্ষের তিন পাতায় আবার তিন পাতা থেকে নবপত্রিকা নবপত্রিকা থেকে পুনরায় এক চৈতন্য মিলিত হয়। পরিশেষে বলা যায় সপ্তমী পূজার মূলভাব হলো আনন্দ মা এসেছেন তাই সন্তানেরা আনন্দের জোয়ারে ভেসে যায় আর আনন্দ প্রমাণিত হলেই পূজা শুরু হয়।
এদিকে গতকাল প্রথম পুজোর দিনেই নগরীর প্রতিটা পূজা মন্ডপে দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড় ।
পাশাপাশি নগরীর প্রতিটা পুজো মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন খুলনা জেলা পুলিশ কমিশনার।
এ সময় পুলিশ কমিশনার মন্দিরের পূজা পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে বলেন শারদীয় দূর্গা উৎসব সার্বজনীন সবাই এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
কিন্তু কোন দুষ্কৃতকারীরা মনে ধ্বংসাত্মক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে পূজার দর্শনার্থীদের জনসমাগমে সামিল হয়ে নাশকতা করার চেষ্টা করলে তাদের কোনক্রমে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন মহলের সকল ধরনের কর্মকর্তা সজাগ অবস্থানে রয়েছে।
উৎসব পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ ভূমিকায় থাকবেন বলে পুলিশ কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন।
আগামীকাল ১১অক্টোবর এবছর তিথি অনুযায়ী একই দিনে অষ্টমী কুমারী পূজার কিছুক্ষণের মধ্যেই ও মহানবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।