বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
বছরের একেবারে শেষের দিনে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় চরম হতাশার ছাপ কৃষকদের কপালে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ গেল কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টির কবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি সকল ধরনের রবিশস্য ফলনের ক্ষেত্রে সাথে আমন ধান চাষ করেও লোকসানের হতাশায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আমাদের । এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদিও কোন ক্ষতি হয়নি উপরন্ত কৃষকদের লক্ষ্যমাত্রা অনুপাতে ফলন ভালো হলেও বছরের একেবারে শেষের দিন মঙ্গলবার বটিয়াঘাটা হাটে ধান বিক্রি করতে এসে ধানের দাম কমে যাওয়ার হিড়িক দেখে হতাশায় কৃষকরা।
কৃষকদের আক্ষেপ এত দাম কম পেলে ছেলে মেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সারা বছর চলতে কষ্ট হবে, কাঙ্খিত স্বপ্নের ফসল আমন ধান বিক্রি করতে এসে হতাশা ব্যক্ত করলেন কৃষক আমিনুল,
এ সময় আরো একজন কৃষক বলেন সপ্তাহের আমন ধানের সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম পড়ে যাওয়ায় হতাশ আমাদের মতন সাধারন কৃষকরা ।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে,দেশের দক্ষিণ অঞ্চল খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, চালনা, দাকোপ উপজেলায় ২৮ হাজার ৪১০ হেক্টরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলনও ভালো পেয়েছেন কৃষকরা।বলা যেতে পারে খুলনা অঞ্চলে সর্ববৃহৎ হাট বটিয়াঘাটায় চলতি মৌসুমের আমন ধান জটা ধান সহ কয়েক প্রকারের ধান আমদানি হয়ে থাকে। পাইকার, আড়তদার ও ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা নাগরিক ভাবনাকে জানান, প্রতি মণ স্থানীয় প্রকারভেদে মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ইরি প্রতি মণ ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ২৬০ টাকা, স্বর্ণমুসরী ১ হাজার ৩০০ এবং সুগন্ধি জাতের কালোজিরাধান ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বরাবরের মতো আগাম জাতের শাইল ধানের সরবরাহ কমলেও হাটে ভর মৌসুমের আমনের সরবরাহ বেড়েছে। বছরের শেষ দিনে খুলনা জেলার অন্তর্গত বটিয়াঘাটা ধানের হাটে আমন ধানের দাম প্রতি মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। ধান বিক্রি করতে আসা বটিয়াঘাটা উপজেলার পার্শ্ববর্তী এলাকার ভুক্তভোগী একজন কৃষক বলেন, ‘২৫ মণ মোতামোটা ধান আনছিলাম। ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে দিছি। কারণ ধার দিনায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছি । সাথে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ লেগে আছে তার মধ্যে যদি এই রকম কোম দাম পাই তাহলে সারা বচ্ছর চলবো কিভাবে । কৃষকরা বাঁচবে কিভাবে।’
হাটের দিন চট বিছিয়ে ধান কিনে ব্যবসা করেন মহিদুল আল ইসলাম। ৪০০ মণ মোটা ও ইরি-২৩ জাতের ধান কিনেছেন তিনি। করেন কৃষিকাজও। মুকুন্দ বিশ্বাস এ বছর ১ একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন তিনি। বছর মেয়াদি জমির ক্রয়মূল্য হিসাবে ৬ হাজার টাকা পরিশোধের পর প্রতি শতাংশে ৫০ টাকা হিসেবে চাষের খরচ হয়েছে। এরই সঙ্গে বীজ, চারা রোপণ ছাড়াও সার-ওষুধে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এরপর ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে যে খরচ হয়েছে তাতে ধানের দাম উঠবে না। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, চাষবাসে নানা প্রতিকূলতার পরে বাজারদর পড়ে গেলে কৃষক ধান চাষ করবে কেন। গতকাল মঙ্গলবার বটিয়াঘাটা হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কিসমত আলী নামের একজন কৃষক বলেন এই হাটে হাজার হাজার মণ ধান কেনাবেচা হয়। আগের সপ্তাহে এ হাটে মণপ্রতি সাদামোটা ও বিভিন্ন মোটা জাতের ধানের মূল্য ছিল ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। এ সপ্তাহে তা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে গেছে। এখানকার নিচু অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক বছরভর তাকিয়ে থাকে আমন ধানের ওপর। পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য কৃষকরা সাধারণ আমন ধান আবাদে বেশি নির্ভরশীল। অথচ জমির মূল্য, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরিসহ মণপ্রতি ধান উৎপাদনের খরচ অনেকাংশে বেশি হয়ে যায়। এখন আমন ধানের বাজারদর ভালো না পেলে বোরোসহ অন্যন্য রবিশস্য আবাদে কৃষকরা হাত গুটিয়ে রাখবে। ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় এখানকার কৃষকের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশা। সংসারের খরচ চালাতে ১৫ মণ ধান বিক্রির উদ্দেশ্যে হাটে নিয়ে গেলেও দর কম থাকায় বিক্রি না করে ফের বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে দেখা যায় পান খালি এলাকার গোপালদীর কৃষক স্বপন হালদার কে ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাগরিক ভাবনাকে জানান, এ বছর সরকার নির্ধারিত মণপ্রতি ১ হাজার ৩২০ টাকা হিসাবে কৃষকের কাছ থেকে ২ হাজার ৩০০ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকা অনুযায়ী ৩০০ কৃষক অনলাইনে আবেদন করেছেন। তবে এসব কৃষকের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধান পাওয়া যায়নি। সংগ্রহ শুরু হলে ধানের দাম বাড়বে। বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তপন ব্যানার্জি বলেন, দেশের অন্য সকল এলাকার তুলনায় এখানকার ফসল মৌসুমের ২০ থেকে ২২ দিনের ব্যবধান থাকে। উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলে এখন আমন কাটার ভর মৌসুম চলছে। চলতি মৌসুমে আমনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলনও ভালো পেয়েছে কৃষকরা। তবে বর্তমান বাজারদর মন্দা গেলেও সরকারিভাবে কৃষকদের কার নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করা শুরু করলে আমন ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। তবে ক্রয় ক্ষেত্রে যদি কোন কাল বাজারী সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়ে তাহলে কৃষকদের হতাশার আধার কেটে আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে না।