নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।।
নবীগঞ্জে স্বরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষে আরেকজন নিরীহ লোকের প্রাণ ঝড়ে গেলো। তিনি হলেন আনমনু গ্রামের রিমন মিয়া। তার নির্মম হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তোলেছেন এলাকাবাসী। ঘটনার নায়ক বড় বড় রাঘব বোয়ালরা আইনী মারপ্যাচে বা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে যাহাতে পার না পান সেদিকে খেয়াল রাখার দাবী উঠছে।
গত ৭ জুলাই নবীগঞ্জ বাজারে স্বরণ কালের ভয়াবহ সংঘর্ষে গুরুতর আহত আনমনু গ্রামের আউয়াল মিয়ার পুত্র রিমন মিয়া (৩৫) শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এই যুবকের মৃত্যর খবর নবীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যূর খবর রাত সাড়ে ৮টায় আনমনু মসজিদের মাইকে মাইকিং করা হয়। সিলেট ওসমানী ওসমানী মেডিক্যালে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন।
জানাযায়, এ ঘটনায় সংঘর্ষে আহত হন শতাধিক ও নিহত হন এ পর্যন্ত দুই জন এবং ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে। এতে অংশ নেন উপজেলার পুর্ব তিমিরপুর,পশ্চিম তিমির পুর, চরগাও, আনমনু, নোয়াপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের মনসুর পুর গ্রামের সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশার সঙ্গে পূর্ব তিমিরপুরের সাংবাদিক সেলিম তালুকদারের ফেসবুকে লেখালেখি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকেই এ উত্তেজনা ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, তিমির পুর গ্রামের মানুষ তাদের গ্রামের মাঠে মিটিং করে সদ্য সাবেক এক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে লাটি সোটা, রামদা,সুলফি নিয়ে ঐদিন দুপুরের শহরে আসলে গাজীরটেক পয়েন্টে মুখোমুখি হয় দুপক্ষ। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গাজীরটেক, মৎস্যজীবী পাড়া, চরগাঁও ও পশ্চিম বাজার এলাকাসহ সারা নবীগঞ্জ শহরে।
এ সংঘর্ষে আনমনু গ্রামের গুরুতর আহত রিমন মিয়া(৩০) সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যা কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে কোমায় ছিলেন। দীর্ঘ ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে মারা যান।
সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক, ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন রিমন মিয়ার মৃত্যু। সে আইসিইউতে আশংকাজনক অবস্থায় এতোদিন ছিল।
গত বুধবার দুপুরে ঘটনা নিস্পতির জন্য নবীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ও রাজনৈতিক নেতারা শহরে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আউশকান্দি বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এক সালিশ সভায় বসেন। ঐ সালিশ সভা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এতে উপস্থিত হননি তিমিরপুর চরগাও গ্রামের বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া ও নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমদ চৌধুরী । তারা একটি আলাদা বলয় সৃষ্টি করে অন্যভাবে সালিশির চেষ্টা করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় আর সালিশি প্রক্রিয়া আগানো হয়নি।
এরপর দুটি মামলা হয়, একটি ৮জন সাংবাদিকসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশের এসআই রিপন চন্দ্র বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয় ৫০০০ লোকের বিরুদ্ধে । অপরটি শুক্রবার রাতে নিহত ফারুক মিয়ার স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে ১০ সাংবাদিক সহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় মুল ঘটনাকে আড়াল করে নিরপরাধ মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গ্রামের আইনজীবী, সাংবাদিক, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী ও সিংহভাগ বিএনপি,যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছে। উক্ত আসামী সবাই ওই সদ্য সাবেক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে উনার আজ্ঞাবহ আনমনু, রাজাবাদ বা অন্যান্য গ্রামের কাউকে আসামি করা হয়নি। এছাড়াও ইনাতগঞ্জ করগাওঁ ও গুমগুমিয়া গ্রামের অমৎস্যজীবি পরিবারের একাধিক আসামী রয়েছেন। উক্ত মামলা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্ব মহলে নিন্দার ঝড় উঠে। বিশ্লেষকগণ বলেছেন, রাজনৈতিক পায়দা হাসিল ও গঠিত শালিসি বোর্ডের পক্রিয়া বানচাল করার হীন মানসেই এমনটা করা হয়েছে। এলাকাবাসী ওই সব রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনলেই নবীগঞ্জের পরিবেশ শতভাগ শান্ত হতে পারে। এমন অভিমত সাধারণ মানুষেরও।