পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি,
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন পঞ্চগড়ের ছাত্রসহ পাঁচজন। নিহত পাঁচ পরিবারের মধ্যে চার পরিবারের হাতে নগদ আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর পক্ষ থেকে সমন্বয়ক সারজিস আলমের ছোট ভাই সাহাদাত হোসেন শাকিব ।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক ও সমন্বয়কদের সাথে নিয়ে সারজিস আলমের ছোট ভাই সাহাদাত হোসেন শাকিব নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিহতদের পরিবারে হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন।
সহযোগিতা পাওয়া পরিবারগুলো হচ্ছে জেলার সদর উপজেলার চাকহাট ইউনিয়নের সাগর ইসলাম (২১), দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামের সাজু মিয়া (২৬), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের প্রধানহাট এলাকায় বাড়ি আবু ছায়েদ (৪২), দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের কাদেরের মোড় মেলাপাড়া গ্রামের শাহাবুল ইসলাম শাওন (২৮)।
গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে পরিবার চালাতেন সাজু মিয়া। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। গত ৫ আগস্ট একদফা দাবির আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাজু। তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড়। কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের নামের সাথে মিল রেখে তার নবজাতক শিশুর নাম রেখেছিলেন আবু সাঈদ। তার উপার্জনেই চলতো পরিবার।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মুদি দোকান করতেন আবু সায়েদ। ১৯ জুলাই (শুক্রবার) নামাজের পর দোকানের জন্য পলিব্যাগ আনতে সড়কে বের হলে আন্দোলনের মিছিল লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ঘটে। সেই গুলিবর্ষণে তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান তিনি। তার গ্রামের বাড়ি বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের প্রধানহাট এলাকায়। ঢাকা থেকে পাঠানোর টাকায় চলতো গ্রামের বাড়ির পরিবার।
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট এলাকার সাব্বির হোসেন সাগর (১৯) এবং দেবীগঞ্জে টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের কাদেরের মোর মেলাপাড়া এলাকার শাহাবুল ইসলাম শাওন। ঢাকার আন্দোলনে তারা মারা গেছেন।
এদিকে নিহত পাঁচ জনের মধ্যে আরেক জন হলেন সুমন আলী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকায় আশুলিয়ায় প্রাণ হারান সুমন আলী। কাজের সুবাদে থাকতেন ঢাকার আশুলিয়ায়। সেদিন মিছিলে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয় তাকে।
নিহত পরিবারগুলোকে অর্থ সহায়তা প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর পক্ষ থেকে সমন্বয়ক সারজিস আলমের ছোট ভাই সাহাদাত হোসেন শাকিব বলেন, পঞ্চগড়ে আমাদের পাঁচজন ভাই শহীদ হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যতটুক আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করা যায় ততটুক আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে আমরা এসেছি।
এ সময় পঞ্চগড় জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী,মোকাদেসুর রহমান সান, খোরশেদ মাহমুদ, আশিকুজ্জামান, রাশিদুল ইসালাম রাশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।