রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি
পানছড়িতে বিপুল-লিটন-রুহিন-সুনীল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, সেনা প্রধানের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি ও ২৪ পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তর অভিমুখে পুলিশী বাঁধার মুখে পদযাত্রা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘসহ ০৫ টি সংগঠন৷
সমাবেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী জেসি চাকমা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রামের নেত্রী আসমা আকতার, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সাইফুর রুদ্র, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোহেল চাকমা। পিসিপি চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম নগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাক।
চট্টগ্রামের বাসদ (মার্কসবাদী) দলের নেত্রী আসমা আকতার বলেন, ডিসেম্বর মাসে ০৪ তরুণ নেতা হত্যার ঘটনা ন্যাক্কারজনক। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই । ৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। চার তরুণ নেতাকে হত্যাসহ বহু হত্যাকান্ড, গুম সংঘটিত হয়েছে। দফায় দফায় এই অপহরণ,গুম হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য কি? ৯৭ সালে কথিত “শান্তি চুক্তির” নামে পাহাড়ের জনগণকে বিভক্ত করা হয়েছে, অঘোষিত সেনা শাসন কায়েম করা হয়েছে। অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার করতে হবে। পাহাড়ি মানুষের রক্তেস্নাত মাটিতে দিনের পর দিন অবকাশযাপনের কেন্দ্র গড়ে উঠছে। তিনি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে আরো বলেন, এসব চিন্তা থেকে সরে আসুন। পাহাড়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে সেটা স্বাধীন দেশের চিত্র হতে পারে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি সাইফুর রুদ্র বলেন, পাহাড়-সমতলে নিপীড়িত জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে তবেই জনগণের শত্রুদের আমরা চিহ্নিত করতে পারব। অবিলম্বে সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিতে হবে। বিপুল চাকমাসহ ০৪ তরুণ নেতা হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে।
পিসিপি চট্টগ্রাম নগর সভাপতি সোহেল চাকমা বলেন,
পানছড়ি হত্যাকান্ডের ০১ মাস ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। বরং স্থানীয় সেনা-প্রশাসন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। পাহাড়ি জনগণ নিজেদের স্বকীয়তা ও স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশ-মুগলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম করেছিল। ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িরাও পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছিল কিন্তু পরিহাসের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বঙ্গবন্ধুকে-জিয়াউর রহমানকে পাহাড়িরা নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিল তাঁরাই পাহাড়িদের বাঙালি হওয়ার প্রমোশনের ঘোষণা দেন এবং পাহাড়িদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালান। জাতীয় নেতৃত্বরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনাদের হাতে তুলে দিয়ে সেনাশাসনকে জিইয়ে রেখেছে।
সমাবেশের সভাপতি শুভ চাক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কতিপয় কর্মকতা প্রমোশন-বাণিজ্য এবং তাঁদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নিপীড়িত পাহাড়ি জনগণের কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য গত ১১ ডিসেম্বর ২৩ পানছড়িতে ০৪ তরুণ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
আজ ১৯ জানুয়ারি ২০২৪(শুক্রবার) চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ পরবর্তী চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তর অভিমুখে পদযাত্রায় শত শত ছাত্র-যুবক-জনগণ অংশ নেন। পদযাত্রাটি চট্টগ্রাম চেরাগী মোড় থেকে শুরু হয়ে জামালখান-কাজির দেউরী-ওয়াসাতে গিয়ে পুলিশের বাধাঁর সম্মুখীন হয়। বাঁধা পেরিয়ে গিয়ে জিইসি হয়ে ২নং গেইট পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাঁধা প্রদান করে। এই সময় প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিটি” ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসিকে পৌঁছিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ০৫ সংগঠনের নেতৃত্বরা খোলা চিঠিটি খুলশী থানার ওসির কাছে তুলে দেন। পরে মিছিল সহকারে নগরের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়।