হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
অবৈধ ভাবে প্রকাশ্যে ৩ ফসলি জমির মাটি কাটা ও ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। চলছে ফসলী জমির মাটিকাটা উৎসব। তিন ফসলী কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুর-ডোবায়। দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।
মাটি পরিবহনে ভারী ট্রাক ও মাহেন্দ্র ট্রলি ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকাণ্ড চলছে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলার ধর্মঘর ,,চৌমুহনী ,বহরা ,বুল্লা ,জগদীশপুর,শাহজাহানপুর ও বাঘাসুরা ইউনিয়নে ভেকু দিয়ে এ মাটি কাটছে। অবৈধ মাহেন্দ্র চলাচলে ধুলার কুয়াশায় ডেকে গেছে গোটা এলাকা।
বেপরোয়া ট্রাক্টরের চাপায় সড়কে ঝড়ছে তাজা প্রাণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উল্লেখিত ৭টি ইউনিয়নে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক রাস্তায় ধুলার কুয়াশায় ডেকে গেছে। এই রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে শ’খানেক মাটির অবৈধ মাহেন্দ্র চলাচল করে। এলাকা ধুলা-বালুতে আচ্ছন্ন হয়, এতে করে যাতায়াতে নানা শ্রেণির মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে জনমনে ক্ষোভ।
এ অবস্থায় দিশেহারা ও অসহায় জীবন যাপন করছে এবং স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পরছে হজার হাজার মানুষ। এ ধুলার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিশু অসুস্থ্য হয়ে পরছে বেশী। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে উপস্থিতির হার কমেছে ৪০ শতাংশ।
শিবপুর গ্রামের আক্কাস মিয়া জানান,আমার পাশের জমিতে মাটি কাটার ফলে আমার জমির পাড় ভেঙ্গে যায়। জমিতে সেচের পানি আটকে রাখা যাচ্ছেনা। তাই জমিতে ফসল ফলানো যাবেনা। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনকে পূর্বেই অবহিত করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার মাটিভর্তি ট্রাক ও ট্রলিগুলো নেয়া হচ্ছে গ্রামীন ও ইউনিয়ন সড়ক দিয়ে। ফলে রাস্তাগুলো উচু-নিচু এবং বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকা ধুলা-বালুতে আচ্ছন্ন হয়, এতে করে যাতায়াতে নানা শ্রেণির মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারি গেজেটে প্রকাশিত মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইটের কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দণ্ডেদন্ডিত হইবেন।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাচাঁমাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হইলে তিনি ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এসব আইন থাকার পরও ভূমিদস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসন চোখের সামনে এসব কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করার পরও প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এলাকাবাসীর মনে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম ফয়সাল জানান,মাধবপুর উপজেলা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার বিষয়ে প্রশাসন অবগত রয়েছে এবং যখনই অভিযোগ পাচ্ছি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি এবং যেসব ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সারজমিনে পাওয়া যায় না, সে ক্ষেত্রে আমরা নিয়মিত মামলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তারপরও যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকে আমাদেরকে অবগত করলে, আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।