আব্দুল গাফফার
শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে বিগত চারদিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানির অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। এমন কি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পৌরশহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডসহ উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই হাজার পরিবার। পানিবন্দি ওইসব পরিবার চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত এক সপ্তাহে স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টি হওয়ায় বাঙালী ও করতোয়া নদীতে পানি বাড়ছে। পানি ঢুকে পড়েছে পৌর শহরের পূর্ব ঘোষপাড়া, পূর্বদত্তপাড়া, নামা ঘোষপাড়া ও উত্তর সাহাপাড়ার শতাধিক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
এসব বাসা-বাড়ির মধ্যে এখন হাটু পানি। পাশাপাশি উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের দশটি গ্রামের চারশ’ পরিবার, খামারকান্দি ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামের তিনশ’ পরিবার, গাড়ীদহ ইউনিয়নের চারশ’ পরিবার, খানপুর ইউনিয়নের চারশ’ পরিবার, সুঘাট ও সীমাবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত নয়শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে গেলে কথা হয় পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিমাই ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তার ওয়ার্ডের তিনটি মহল্লায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার শতাধিক বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। অনেকের শয়নকক্ষে বুকসমান পানি। এরমধ্যে পঁচিশটি পানিবন্দি পরিবার বাসা-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন শহরের শেরপুর ডিজে মডেল হাইস্কুলের চারটি শ্রেণিকক্ষে। বন্যার পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া সোলায়মান আলী বলেন, তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। টানা বৃষ্টির কারণে দিনমজুরি করতে পারছেন না। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আয়- রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর সংসার চলছে না বলে মন্তব্য করেন। একই প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া মিন্টু মিয়া ও মলি বেগম বেগম বলেন, সরকারিভাবে এখনো কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদিকে টানা বৃষ্টিতে শতশত বিঘা জমির আমন ধান ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে অনেক জলাশয় ডুবে যাওয়ায় লাখ লাখ মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, প্রবল বর্ষণে অনেক জলাশয়ের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সেটি নিরুপণের চেষ্টা চলছে। তাই এই মুহুর্তে ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান বলা সম্ভব নয়।
একই কথা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার। তাঁর দপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন বলে দাবি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেসব এলাকাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।