আব্দুল গাফফার
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের দায়ের করা নাশকতা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির এক কর্মীকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর নাম আব্দুল মতিন (৬০)। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের মান্দাইল গ্রামের ফসলি মাঠ থেকে নিহতের লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত আব্দুল মতিন ওই গ্রামের মৃত কছিম উদ্দিনের ছেলে। নিহতের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত পনের নভেম্বর বিএনপিসহ সমমনা দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। পরদিন ওই ঘটনায় শেরপুর থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় ৬৪ নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন বিএনপির কর্মী আব্দুল মতিন। এই মামলা দায়েরের পর থেকে প্রতিরাতে গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় মাঠের ধানক্ষেতে রাতযাপন করতেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২২নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ফসলি মাঠে রাতযাপনের জন্য বাড়ি থেকে বের হন। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শ্রমিকরা ধান কাটতে মান্দাইল মাঠে গিয়ে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গ্রামের লোকজনকে খবর দেন তারা। এরপর লোকজন এসে এটি বিএনপি কর্মী আব্দুল মতিনের লাশ বলে শনাক্ত করেন। সেইসঙ্গে থানায় সংবাদ দেওয়া হলে পুলিশ এসে নিহতের লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় বলে জানান তারা।
নিহতের ভাগ্নি জামাই মোস্তাফিজার রহমান বলেন, তার মামা শশুরের তেমন কোনো শক্র ছিল না। বরং এলাকার সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক মামলা হয়। এরপর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে রাতযাপন করতেন। বিশেষ করে সেচ পাম্প ও মাঠের ধানক্ষেতে থাকতেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সন্ধ্যার দিকে ধানক্ষেতে রাতযাপনের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরদিন তার লাশ পাওয়া গেল। তিনি আরো বলেন, সম্ভবত রাতের কোনো এক সময় তার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেইসঙ্গে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। এমনকি তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরের একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে নিহত আব্দুল মতিন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কী-না তা জানা নেই। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কী-না তা খোঁজখবর নিয়ে বলতে হবে। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবলু এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, নিহত আব্দুল মতিন একজন বিএনপির নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিশালপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ৭১ নম্বর সদস্য। এছাড়া দুঃসময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই বিএনপির চলমান সব কর্মীসূচিতেই উপস্থিত থাকতেন। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশের ভয়ে রাতে বাড়িতে থাকতেন না। এমন পরিস্থিতে খুন হন ওই বিএনপি কর্মী। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র আছে কী-না তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন। বিএনপি কর্মী আব্দুল মতিনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, এই ধরণের চোরা-গোপ্তা হামলা চালিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।