-আবুজর গিফারী
বেড়া উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী কৈটোলা ইউনিয়ন এর অন্তর্গত একটি গ্রাম নাম হরিরামপুর। উক্ত গ্রামে বসবাস করেন নিম্ন আয়ে জীবিকা অর্জনকারী মোহাম্মদ আবদুর রহিম মোল্লা (৪৬)। গতকাল ১৩ মার্চ, রবিবার, আনুমানিক রাত ১০:৩০ এর দিকে তার বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন থামানোর জন্য এলাকাবাসী একজোট হয়ে প্রায় ৩০ মিনিট চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর মাঝেই অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পরিবারটি। মূলত আব্দুর রহিমের থাকার ঘরের সামনে গরুর গোয়াল ঘরে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে গোয়াল ঘর এর বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। গোয়ালে ঘরে থাকা গরুটির শরীরের প্রায় বেশির ভাগ অংশ আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে।
সরে জমিনে জনাব আব্দুর রহিমের স্ত্রী মোমেনা (৩৫) এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শো শো শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙে ঘর থেকে বের হতেই সে দেখে সামনের ঘরটি আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে আর আগুনের তীব্র ভয়াবহ শব্দ হচ্ছে। মূলত সেই শব্দেই তার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সে তার স্বামীকে ডেকে দুজন মিলে আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। যখন তারা আগুনের তীব্রতা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে দেখে, এমন কি তাদের থাকার ঘরের দিকে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন তারা থামাতে ব্যর্থ হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের বাড়ির লোকজন এসে একজন হয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করতে থাকে। একটা পর্যায়ে প্রায় আনুমানিক আধা ঘন্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তারা যদি আরও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতো তাহলে হয়তো আগুনের ভয়াবহতা আরো বেড়ে গিয়ে প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হতো ঘুমিয়ে থাকা আব্দুর রহিম তার স্ত্রী সহ আরো দুই সন্তানের।
তিন কন্যা ও এক ছেলের জনক আব্দুর রহিমের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, এশা নামাজ শেষ করে উক্ত মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলতে বলতে সে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে গরুর ঘরে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় গরুর তদারকি করে আনুমানিক রাত দশটার দিকে সে ঘুমিয়ে পড়েন। সে জানান যে স্ত্রী তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললে আগুনের তীব্রতা দেখে সে ভয় পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। আরো জানান যে ঘরটিতে থাকা গরুটি কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি করার জন্য তারা গরুটিকে (আনুমানিক মূল্য আনুমানিক মূল্য ২ লাখ টাকার মত) যোগান দিয়ে আসছে। গরু বিক্রির টাকা দিয়েই আব্দুর রহিমের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনা নিয়ে আশায় বুক বেঁধে ছিল, মুহূর্তের মধ্যেই তার সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গরুর ঘরটিতে মশা দূর করার জন্য যে কয়েল জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল, সম্ভবত সেই কয়েল গরুর পায়ের অথবা লেজের ধাক্কায় শুকনো গোবরের ভুষির উপরে পড়ে গিয়ে সেখান থেকেই হয়তো আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। উক্ত আগুন ঘরটিতে থাকা শুকনো পাটকাঠির (শোলা) সংস্পর্শের আসার সাথে সাথে তা তীব্র আকার ধারণ করে ভয়াবহতায় রূপ নেয়। আর সেই আগুন ক্ষতিগ্রস্ত করল সহজ-সরল নিম্ন আয়ের মানুষ আব্দুর রহিমের পরিবারকে।