মোঃ আশরাফুল ইসলাম
রাজনৈতিক ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং। কোনো কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে গ্রাম পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোররা। মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ ও আধিপত্য নিয়ে বিরোধে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে তারা। কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নানাভাবে চেষ্টা করেও পেরে উঠছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ডাটাবেজ তৈরির কাজ চললেও মিলছে না সুফল।
গ্রামগঞ্জেও বিস্তৃত হয়েছে কিশোর অপরাধীদের নেটওয়ার্ক।ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও একশ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় থেকে পাড়ামহল্লা, অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানোর কারণে সবার কাছে আতঙ্কের নাম এখন ‘কিশোর গ্যাং’।
এলাকার জ্যেষ্ঠ লোকজন জানান, আগে তাদের সামনে এই বয়সের সন্তানরা ভয়ে আসতো না। তাদের এখন চাঁদা দিয়ে চলতে হয়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা কমছে না। কিশোর গ্যাং লাঠিয়াল বাহিনীর মতো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। পাড়ার একশ্রেণির মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যান, কোনো কোনো সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের প্রশ্রয় দেয়। তাদের দিয়ে দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি করাচ্ছে। কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এসব কিশোর গ্যাং প্রকাশ্যে মানুষ খুনও করে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এদের উত্থানের মূলে রয়েছে মাদক। তারা পকেটে ইয়াবা নিয়ে চলে, বিক্রি করে। কেউ অর্ডার দিলে মোটরসাইকেলে দিয়ে পৌঁছে দেয়। স্ব স্ব থানার একশ্রেণির পুলিশ নিয়মিত তাদের কাছ থেকে মাসোহারা পায়। তাদের ধরতে গেলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের দলীয় লোক বলে ছাড়িয়ে নেয়।
শুরুতে আড্ডা, পার্টি বা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মতো অপরাধে যুক্ত থাকলেও এখন তা বিস্তৃত হয়েছে ভয়ংকরভাবে। আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে জবরদখল ও মাদকবাণিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বখাটে কিশোরদের। এমন কোনো অপরাধ নেই কিশোর গ্যাং করছে না। তারা সিগারেট, চা বাকিতে খায়। এদের পকেটে ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র থাকে। ভোটের সময় নেতাদের পক্ষে সিল মেরেছে। মাদক হলো তাদের আয়ের উৎস।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদক সর্বনাশা তাদের গ্রাস করে করেছে। এটা দেশের জন্য খারাপ বার্তা। এটা চলতে থাকলে উন্নয়নে বড় বাধার সৃষ্টি করবে। মানুষের প্রথম বিষয় হলো নিরাপত্তা।কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে মানুষ মুক্তি চায়। সরকার সমর্থকদের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক মদতে কিশোর গ্যাং নামে উঠতি কিশোরদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। যারা কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেশব্যাপী সব থানাকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে কোনো আপোষ নেই। যেখানে কিশোর গ্যাং অপরাধ করবে, সেখানেই ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, র্যা ব মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অলআউট ব্যবস্থা নিচ্ছে। সারা দেশে র্যারবের পক্ষ থেকে কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করে অভিযান চলছে। আমরা ছাড়ব না। কোনো অবস্থাতেই দেশে কিশোর গ্যাং বলতে কোনো চিহ্ন রাখব না।