হারুন শেখ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট জেলা।।
বিশ্বের চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়েছে দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। জলবায়ু সুরক্ষা ও জলবায়ুতে অর্থায়নের নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানায় তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রেসক্লাব রামপাল এর সামনে একশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্ম এক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় তরুন, যুব সংগঠন ও প্লাটফর্ম জলবায়ু অর্থাণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল পুরন নিশ্চিত করতে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে অংশগ্রহণ করেছে।
এই স্ট্রাইক থেকে টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে আন্দোলনকারীরা জানান, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।
এই প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের ও জলবায়ুতে অর্থায়নের দাবি জানান। এসময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এই মর্মে, ফিক্স ফাইন্যান্সে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’ ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো, ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ, ফান্ড আওয়ার ফিউচার,পে আপ ফর লস অ্যান্ড ড্যামেজ , পে আপ ফর ক্লাইমেট ফাইনান্স,জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন স্ট্রাইকে যোগ দেওয়া জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
তরুণ জলবায়ু কর্মী মো. মাহাফুজ মাঝি বলেন, আজ আমরা ফসিল ফাইন্যান্সের অবসান ঘটাতে লড়াই করছি এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়নে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি ধনী দেশ ও কর্পোরেশনের মুনাফা ক্ষুধার্ত মানসিকতায় আমরা আহত হচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যত কিছু লোভী কার্টেলের জন্য লাভের জন্য বলি দেওয়া যাবে না।
উম্মে হাবিবা বলেন, আমরা উপকূলীয়, দিন দিন বিপদপন্নতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছি। আমরা আমাদেরই বিপন্নতা থেকে নিস্তার চাই। আমরা চাই জলবায়ুর এই পরিবর্তন আর বিকৃত ধারণ না করুক। আমরা চাই উন্নত বিশ্ব উন্নত দেশ যারা অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর ফুয়েল এবং কার্বন নিঃসরণ করছে সেই সকল দেশ আমাদের হয়ে যাওয়া ক্ষতির ক্ষতিপূরণ এবং জলবায়ুর ন্যায্যতার পক্ষে থাকুক। আমরা চাই জলবায়ু সুবিচার।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং প্রতি বছর দুইবার একশনএইড বাংলাদেশের তরুণ অ্যাক্টিভিস্টারা জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য তরুণদের দাবির প্রতিধ্বনি করে। এই বছর তারা টেকসই প্রকল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এবং কৃষিগত হস্তক্ষেপে অর্থায়নের পরিবর্তে জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য তাদের ক্রমাগত দাবি জলবায়ু ন্যায়বিচার অর্জন করতে সহায়তা করবে।
রিভার ওয়াটারকিপার জলবায়ু যোদ্ধা মো. নূর আলম শেখ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু উষ্ণতা থেকে আমরা বাঁচতে চাই। মিলিয়ন নয়, বিলিয়ন ডলারে জলবায়ু অর্থায়ন করো। পশ্চিমা দেশগুলিকে প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী জলবায়ু তহবিল প্রদান করতে হবে। বাই-সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানি বিরোধী এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নানা রঙের ফেস্টুন-প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অন্য দিকে মিঠাখালি ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজিত জলবায়ু অর্থায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ফেইজ আউট শীর্ষক বাই-সাইকেল র্যালি, মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।