মোঃরিপন রেজা স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জঃ
শারদীয় দুর্গোৎসব মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা/
মহাষষ্ঠীর।বুধবার ভোরবেলা হতে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।আগামী ১৩ অক্টোবর রবিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসবের।লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী,১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী,১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী।এরপর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান।যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে,যেমন বাধাবিঘ্ন,ভয়,দুঃখ,শোক, জ্বালা,যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তদের রক্ষা করবেন।শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন,দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা।দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন।তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।মহা চণ্ডীতে উল্লেখ আছে,ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন।পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র।সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন।এবছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে।ঐ পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক।দেবী দুর্গার ২০২৪ সালে মর্ত্যে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে,তার ফলাফল হতে পারে মড়ক,যা শুভ ইঙ্গিত নয়।এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চড়ে।শাস্ত্রমতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়।সেই নিরিখে ২০২৪ সালে দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে।শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে।এটি যুদ্ধ,বিগ্রহ,আশান্তি,বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।দুর্গাপূজা ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে সেনাবাহিনী। বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সায়াংকালে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা বিকেল ৫টার পরে আরম্ভ হবে।পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে সোনারগাঁওয়ের কামারগাঁও,ইছবগঞ্জ এবং মোগরাপাড়া আখড়া সহ আরো আশপাশের সকল পূজা মন্ডপ গুলোতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায়ই শেষ হয়েছে।সোনারগাঁও উপজেলায় এখন বইছে উৎসবের আমেজ।ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।উপজেলার কামারগাঁও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমন দত্ত বলেন-বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা বুধবার থেকে শুরু,যা আগামী ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।ইছবগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ দত্ত বলেন-এবারের দুর্গাপূজা আনন্দঘন ভাবে হবে বলে মন্তব্য করেন।মোগরাপাড়া আখড়ার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লোকনাথ দও বলেন-আমরা আমাদের ধর্মাবলম্বীদের সকলকে নিয়ে মা দূর্গার চরণে পড়ে দেশবাসীর জন্য মঙ্গল কামনা করবো।এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন-পূজা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক-সুজন পাল,প্রচার সম্পাদক-জিকু রায়,দপ্তর সম্পাদক-দীপ্ত দও প্রমুখ।সরকারি হিসাব অনুযায়ী,সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ,আনসার,বিজিবি,র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।উপজেলার কামারগাঁও পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ,আরতি প্রতিযোগিতা,স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে কামারগাঁও,মোগরাপাড়া আখড়া এবং ইছবগঞ্জসহ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)বলেন-হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজায় উপজেলার প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক নিরাপত্তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে।পূজা মন্ডপে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদের সোনারগাঁ থানা পুলিশ কাজ করে যাবে।
