মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
সমাগত সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এক মাস চলবে রমজানের আত্মশুদ্ধি আর সিয়ামের সাধনা। প্রতিটি মানুষের আত্মাকে পুত পবিত্র করে তোলার জন্য এই মাসটির রয়েছে অনন্য ভূমিকা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসেই নিজেকে শুধরে নেয়ার জন্য একাগ্রচিত্তে সাধনা করেন।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রেখে রোজাদাররা সংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা নেয়। পরহেজগারির তাক্বওয়া অর্জনের পরিপূর্ণ শিক্ষার জন্য মাহে রমজানের মতো উপযুক্ত আর কোন উপলক্ষ নেই। তাই রমজানের রোজা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয়।রমজানের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা রয়েছে তারা এ মোবারক মাসকে বরণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
রমজান হলো আখেরাতের পুঁজি অর্জনের মাস, সওয়াব কামানোর মৌসুম, যে মাসের একটি নফল অন্য মাসের ফরজ সমতুল্য আর ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমতুল্য। এটা দয়াবান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট নেয়ামত। বান্দার প্রতি রাব্বুল আলামিনের অপরিসীম করুণা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিকে রোজার বিধান দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রহমতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দ্বার বান্দার জন্য সর্বদা উন্মুক্ত থাকে। রাত-দিন প্রতি মুহূর্তে বান্দার প্রতি বর্ষিত হয় রহমতের বারি। সুতরাং এ মাস জীবন গঠনের মাস।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব মাস এলে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’ রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন।
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজানের পর সবচেয়ে বেশি শাবান মাসে রোজা রাখতে দেখেছি’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সুতরাং আমাদের রজমানের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।রমজানের রোজাগুলো শুদ্ধভাবে আদায় করা এবং তারাবির নামাজের জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। দুনিয়ার ঝক্কি-ঝামেলা কমিয়ে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। অন্তত রমজানের জন্য দুনিয়ার ব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা উচিত। রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ পাপ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়। কারণ পাপের প্রধান অঙ্গ পেট ও যৌনাঙ্গ। অর্থাৎ অধিকাংশ পাপকাজ সংঘটিত হয় এ দুটি অঙ্গের কারণে। রোজার দ্বারা এ দুই অঙ্গের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
একটি হাদিসে নবীজি (সা.) যুবকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হে যুব সমাজ! তোমরা যারা বিয়ে করতে সক্ষম নও তারা যেন রোজা রাখে। এতে যৌনপিপাসা কুঁজো হবে।’ রোজা শুধু পানাহার ও যৌন-সংক্রান্ত গুনাহ থেকেই নিবৃত্ত রাখে না বরং রোজাকে পরিপূর্ণ করতে সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। তাই তো রোজাদার ব্যক্তি চোখ, কান, জবান ইত্যাদি অঙ্গকেও হেফাজত করার চেষ্টা করে রমজান মাসে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে দেখবো সর্বত্রই একটা ভাওতাবাজি আর প্রতারণার মহোৎসব চলছে। যেন সংযমের চেয়ে বেশি অসংযমী হয়ে উঠছি আমরা। আত্মশুদ্ধির চেয়ে আত্মকলুষিতই হচ্ছে বেশি। যেন নিজেকে শুধরে নেয়ার পরিবর্তে নিজের পশুত্বকেই জাগিয়ে তুলছি। আর এভাবেই ভুলণ্ঠিত হচ্ছে মাহে রমজানের মর্যাদা।
সত্যি বলতে কি, আমাদের ব্যক্তিগত হীন স্বার্থের কারণেই মাহে রমজানের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। কুলষিত হচ্ছে এর চেতনা। আমরা অনেক সময়ই ব্যক্তিগত হীন স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে ধর্মকর্ম পালন করতে পারছি না। অনেক সময় স্রেফ লোক দেখানো পর্যায়ে চলে যায় আমাদের এবাদত বন্দেগী আর সংযম সাধনা। প্রতিটি রমজানেই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয় ঠিকই, তবে দুর্ভোগ বেড়ে যায় রোজাদার আর সাধারণ মানুষের।
অতএব পবিত্র এই মাসে আমাদেরকে বেশি বেশি ইবাদত করে জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে। পাপময় জীবনকে করতে হবে পুণ্যময়। দুনিয়ামুখী জীবনকে করতে হবে আখেরাতমুখী।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-‘রমজান মাসে একজন ফেরেশতা অনবরত ঘোষণা করতে থাকেন-“হে কল্যাণ প্রত্যাশী! নেক কাজে অগ্রসর হও।হে মন্দকাজে লিপ্ত ব্যক্তি! এবার নিবৃত্ত হও।’