নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জ চৌহালীর খাষকাউলিয়া শাখার সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন নিত্য নতুন নাম ব্যবহার করে একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন। মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে অন্যের সংসার ভেঙ্গে নারীর সন্তান নষ্ট, অবৈধভাবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহনসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নামে আরো নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। নারীদের বিভিন্ন লোভ লালসা দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টিতে বারবার অভিযোগ করা হলেও কিছু ব্যাংক কর্মকর্তার ছাত্রছায়ায় দাম্ভিকতার সাথে এ অপকর্ম করে নিরবে চাকুরী করে আসছেন। এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন নারী কেলেঙ্কারীর খবর শুনে ঢাকা জেলার নিপা, নাজমাসহ একাধিক নারী এখন মুখ খুলছেন। আরো জানা যায় এ ব্যাংক কর্মকর্তা প্রশাসনের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে এ অবৈধ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিল।
বাদী শিল্পী খাতুনের মামলাসূত্রে জানা যায়, ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা প্রেমের আশ্বাস দিয়ে আগের স্বামী শাহিনুর ইসলামের সংসার থেকে অপহরন করে বগুড়া জেলায় গত ২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ৪লাখ ৫০হাজার টাকা দেনমোহরানা ধার্য করে বিয়ে করে। এজাহারের অন্যান্য আসামীদের সহযোগিতায় ও প্ররোচনায় বিভিন্ন সময়ে বাদীনির কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবীতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। সকল নির্যাতন সহ্য করে নিরবে সংসারে থাকাবস্থায় বাদীনি অন্তঃসত্তা হয় এবং গর্ভ ধারনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত ২৮ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে রায়গঞ্জের গ্রামীন কল্যানের ডাঃ সাবিহা আফরিনের নিকট পরীক্ষার জন্য গেলে প্রেগনেন্সি পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এ বিষয়ে স্বামী ফরহাদকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে তার কর্মস্থল অর্থাৎ চৌহালীতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এদিকে খবরটি শোনার পর বাদীনির স্বামীর বাড়ীর অন্যান্য লোকজন শিল্পীর সহিত খারাপ আচারন করতে থাকে। এক পর্যায়ে শিল্পীকে গাছের ডাল দিয়া পেটে ও পিঠে বারি মারে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে অবশেষে হত্যার উদ্দেশ্যে কিল ঘুষি মারিয়া হত্যা করার চেষ্টা করে। ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩তারিখে চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া শাখার সোনালী ব্যাংকে নৌকা যোগে স্বামীর ঠিকানায় চলে যান। স্বাভাবিক ভাবে রাত্রের খাওয়া শেষে শোবার জন্য প্রস্তুুতি নিলে ফরহাদ হোসেন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এক গ্লাস দুধের সাথে সন্তান নষ্ট করার ঔষধ মিশিয়ে পান করতে দেন। শিল্পী সরল বিশ্বাসে দুধ পান করে। পরে পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে ও রক্তপাত শুরু হতে থাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাশের পল্লী চিকিৎসক হাফিজের দোকান থেকে ব্যাথা নাশক ঔষধ এনে খাওয়ানো হয়। ওই অবস্থায় গত ৫ ফেব্রæয়ারী ২০২৩ তারিখে সকাল নিজ বাড়ীতে আসে।
গত ১৮মার্চ ২০২৩তারিখে ডাঃ জিনাত ফারজানার নিকট আল্ট্রাসনোগ্রাম কারিলে অসম্পূর্ণ এবোরেশন রিপোর্টসহ চিকিৎসা দেন এবং ২৭মার্চ ২০২৩ তারিখে জনতা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ডাঃ উম্মে হাবিবা শিমু মাইল্ড পেলবিক কালেকশন রিপোর্টসহ চিকিৎসা দেন। এদিকে বিল্ডিং বন্ধ না হওয়ায় ধীরে ধীরে শারিরীক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। গত ৩০মার্চ ২০২৩তারিখে দুপুরে ডাঃ ফারজানা নিকট পুনরায় গেলে তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অসম্পূর্ণ এবোরেশন রিপোর্ট দেন। শিল্পীর সরলতা সুযোগ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ভ্র নষ্টসহ তার অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সিরাজগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এদিকে ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলছেন, গত (২৬ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার স্ত্রীর দাবিতে স্বামী ফরহাদের বাড়ীতে যাই। পরে তারা পুলিশ এনে আমাকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি, মামলার হুমকি ও জোড়পূর্বকভাবে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। এসময় আমার কাছ থেকে নেয়া ১০টি স্বাক্ষরিত ব্লাঙ্ক স্ট্যাম্পের মধ্যে ৬টি স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প উদ্ধার করে রায়গঞ্জ থানার এস আই নুর আলম।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ৯৯৯ এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি তারা স্বামী স্ত্রী। এ সময় ৬টি স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। তথ্য প্রমানাদি সাপেক্ষে স্ট্যাম্পগুলো ফেরত দেয়া হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সব কিছু মিথ্যা। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। আদালতে মামলা করেছে এটা কিছু না সে আমার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। নির্যাতন ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনেক ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি রেখে দেন।