নজরুল ইসলাম:
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এম আর আই মেশিন ক্রয়ের জামানতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাখা ১৪ কোটি টাকার পে অর্ডার দেড় বছরেও ভাঙ্গিয়ে দিচ্ছে না প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড।
জানা যায়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সময় মতো ক্রয় করে স্থাপন করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেড তাদের সরবরাহ করা (এম আর আই) মেশিনটি কার্যাদেশের ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আজও হস্তান্তর করা হয়নি। এদিকে সমমূল্যের নিরাপত্তা জামানত স্বরুপ ১৪ কোটি টাকার পে অর্ডারটির নগদায়ন না দিয়েও টালবাহানা শুরু করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে মাসের পর মাস পে অর্ডার ভাঙাতে ব্যাংকের কাছে ঘুরতে হচ্ছে হাসপাতার কর্তৃপক্ষের।
এ বিষয়ে পে অর্ডারের যথার্ততা জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ এনআরবিসি ব্যাংকের সহকারী ব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান জানান, পে অর্ডার ঠিকাদারের নগদ টাকার বিপরীতে প্রদান করা হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের নিশ্চয়তা বাবদ পে অর্ডার দিয়ে বা নিয়ে থাকে। কোন পক্ষ সেই পে অর্ডার বিপরীতে অপারগতা প্রকাশ করলে পে অর্ডারের টাকা যে কোন সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৮ই মার্চে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেডকে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এম আর আই মেশিন সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করে এবং ওই বছরের জুন মাসে হাসপাতালের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেডকে এম আর আই মেশিন সরবরাহ করা বাবদ ১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা সিরাজগঞ্জ হিসাব রক্ষণ অফিস অগ্রিম বিল প্রদান করেন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্রীন ট্রেড একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষরও করেন। বিশ্ব করোনা ও মহামারীর কারণে এম আর আই মেশিন প্রদান করা যায়নি বলে ১৭ জুন একটি অঙ্গীকার নামা সই করেন। বিল প্রদান কালে গ্রীন ট্রেড কোম্পানি নিরাপদ জামানত হিসাবে দুইটি পে অর্ডার প্রকল্প অফিসে জমা রাখা হয় । ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এম আর আই মেশিন ক্রয়ের বিপরীতে পে-অর্ডার ০২টি ইস্যু করা হয়। যাহার নম্বর (০১) PO, 3580862 সাত কোটি টাকা ও (২) পে-অর্ডার ন PO3580864, সাত কোটি দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা যাহার সবমোট ১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইনক্যাশমেন্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মালামালের বিপরীতে পে-অর্ডারে স্বাক্ষরিত চেক ইস্যু করা হয়। পে অর্ডার প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোড শাখার ২টি পে অর্ডার ( যে কোন সময় নগদায়ন করা যাবে) এমন পে অর্ডার শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক বরাবর জমা দেয়। উল্লেখ্য থাকে এম আর আই মেশিন সরবরাহ মাত্র পে অর্ডার ফেরত যোগ্য। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরে কয়েক দফা মৌখিক ও লিখিত ভাবে তাগাদা দেওয়ার পরও মেশিনটি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোড শাখার ২টি চেক বাবদ ১৪ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকার পে অর্ডার নগদায়নের জন্য গেলে তারা টাকা প্রদান কয়েক দফা অস্বীকৃতি জানায়।
প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোড শাখার ব্যবস্থাপক তৌহিদ্দুজামান জানান, আমি এখনে নতুন এসেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। পে অর্ডারের টাকা প্রদানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন বলে এড়িয়ে মান।
এবিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, টাকা উত্তোলনের আমরা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি । এর আগে কয়েক দফা আমার বিরুদ্ধে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এম আর আই মেশিন না করেই ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি মহল। এমনকি টাকা না দিয়ে অহেতুক হয়রানি করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আমার এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখন আমরা আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবো।