মোঃ আশরফুল ইসলাম,মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি.
প্রকৃতিতে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। আর কদিন পরেই প্রকৃতি তার গায়ে লেপ্টে নেবে বর্ষাকাল। ষড়ঋতুর আবহমান বাংলায় বর্ষাকাল যেন সেরা ঋতু । আর এই বর্ষাকে স্বাগত জানাতে বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে মানিকগঞ্জের প্রকৃতিতে ফুটেছে মন ভোলানো সৌন্দর্য নিয়ে বর্ষাদূত কদম ফুল। চিরচেনা মিষ্টি গন্ধে মেতে উঠেছে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। কদম ফুলের সতেজ নির্মল সৌন্দর্য আর মোহনীয় ঘ্রাণ প্রকৃতি প্রেমীসহ সকলের মনে সৃষ্টি করেছে সম্মোহনী এক ভিন্ন অনুভূতি।
কবিতা ও গানেও সমভাবে সমাদৃত হয়েছে বর্ষাকাল ও কদম ফুল। বর্ষার সঙ্গে কদম ফুলের যেন এক নিবিড় সম্পর্ক প্রাকৃতিক ভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান… আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।পল্লীকবি জসিম উদ্দিন লিখেছিলেন, ‘প্রাণ সখিরে…ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।’
সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর ও দিঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধেভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়েসী কিশোর কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল।চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
মূলত বর্ষা ঋতুতেই প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটে বর্ষাদূত কদম ফুল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া পড়েছে ষড়ঋতুর এই দেশের প্রকৃতিতেও। কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় মাসে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতিতে জৈষ্ঠ্য মাসেই শোভা পাচ্ছে কদম ফুল। কদম এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। এই ফুলের আরেক নাম নীপ। এছাড়াও এ ফুলের আরও কতগুলো নাম রয়েছে, সর্ষপ, সুরভি, পুলকি, মেঘাগমপ্রিয়, বৃত্তপুষ্প, সিন্ধুপুষ্প,ললনাপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী ইত্যাদি।
এ দেশের ফুলগুলোর মধ্যে কদম ফুল অন্যতম। এই গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কদম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus indicus । এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, মালয় ও চীনে। এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। গোলাকার এই ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রংয়ের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।
আদিকাল থেকেই কদম গাছের বিভিন্ন অংশ ও এর ফুল প্রাকৃতিক শোভাবর্ধনের পাশাপাশি মানবদেহের নানা রোগের চিকিৎসায় ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।ভেষজ ঔষধিগুণে ভরা কদম পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এর ব্যবহারে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি ব্যথানাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কদমের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
এই ফুলের সঙ্গে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়।
