মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসায় ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ১০ম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা ২০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী চলমান আন্দোলনের কারণে এই পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
এই মাদ্রাসা থেকে ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় ৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে শুধুমাত্র নির্বাচনী পরীক্ষাই নয়, অন্যান্য শ্রেণির পাঠদানও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সুপারের বিরুদ্ধে পিবিজিএসআই স্কিমের ৫ লাখ টাকা অনিয়ম, ২ জন নিয়োগে ৩.৫ লাখ টাকা বাণিজ্য, ঘর ভাড়ার টাকা, গাছ বিক্রির টাকা, এবং জমি লিজের টাকার অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে।
২৩ অক্টোবর প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মাদ্রাসার মাঠে সুপারের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আন্দোলনের ফলে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, যা অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা সমন্বয়ক হুসাইন আহমেদ ৬ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক দল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে এবং সুপারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিকেল চারটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সুপারের বহিষ্কারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জিহাদ বলেন, “আমাদের নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা আমরা ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি, স্যার আমাদেরকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই সাথে সকল আন্দোলন স্থগিত রেখে সকল শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। স্যারের পরামর্শ ক্রমে আমরা সকল আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেছি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার পেতে।”
মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দাখিল পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এবং ইউএনও স্যারের পরামর্শে শিক্ষার্থীরা সকল আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে এবং আগামীকাল থেকে সবাই যথাক্রমে ক্লাসে উপস্থিত থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমি আশা করছি আগামী কাল থেকে যথাক্রমে ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারবো।”
মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম জানান, “সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এবং আনীত অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল করীমকে আহবায়ক করে এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুব আলম রনি সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুল আলীমকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবং অনতিবিলম্বে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এবং প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।