মোঃ রিপন রেজা স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জঃ
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পাল্টে গেছে রাজনীতির দৃশ্যপট।বিএনপির পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে হাজির বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী দলটি।নির্বাচনমুখী ভোটের লড়াইয়ে রাজনীতিতে জোরালো প্রস্তুতি হিসেবে গত প্রায় ১৫ বছরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে মামলা হামলায় এক প্রকার গোপনেই সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চোখ এড়িয়ে সরকার বিরোধী মিছিল কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিপরীতে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মাঠে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ইসলাম।আগামীতে নারায়ণগঞ্জে ভোটের অঙ্কে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন-গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতের শৃঙ্খলিত ও বিতর্কহীন কর্মকাণ্ড নারায়ণগঞ্জে জামায়াতকে আরও শক্তিশালী বানিয়েছে এবং ভোটারদের সংখ্যা বেড়েছে।এদিকে,আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে পুরোদমে জনগণের ধারপ্রান্তে গিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছে দলটি।দীর্ঘদিন ধরেই দলটি নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি নিতে থাকলেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে জামায়াত ইসলামের নেতারা।দলটির বিগত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণে দেখা যায়,গত বছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান হতে শুরু করে ইসলামপন্থী এই দলটি।শুরুতে জেলা,উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার দিকে মনোযোগ দেয় জামায়াত ইসলাম। পর্যায়ক্রমে কর্মীসভা,সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে থাকে।দলটির কেন্দ্রীয় আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার পাঁচটি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন।সেই সঙ্গে প্রত্যেক আসনে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও।ঘোষণার পরপরই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন প্রার্থীরা।মতবিনিময়,জনসংযোগ ও উঠান বৈঠকসহ চালাচ্ছেন নানা ধরণের প্রচার-প্রচারণা।রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসন। এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মজলিসের শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য এবং সামাজিক সংগঠন রূপগঞ্জ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা।তিনি ইতিপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসন। এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন দলটি জেলার কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।অন্যান্যদের মতো প্রার্থীতা ঘোষণার পর নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন এই জামায়েত নেতা।তবে গত ১৪ জুন আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের গহরদী এলাকায় গণসংযোগ চলাকালীন হামলার শিকার হন জামায়েতে ইসলামের এই নেতা।সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন।এ আসন থেকে জামায়েতে ইসলামীর প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ড.মোঃ ইকবাল হোসাইন ভুইয়া।তিনি ইতিপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন।শিক্ষানুরাগী হিসেবে শিক্ষিত সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।তিনি তার পরিশ্রম ও কৌশলের বিনিময়ে ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছেন।উপজেলা বিএনপি নেতাদের মধ্যে এলোমেলো থাকায় জামাতের দিকে ঝুঁকছে ভোটাররা।ড.মোঃ ইকবাল ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে,উঠান বৈঠক,মসজিদ-মাদ্রাসা ও স্কুলকেন্দ্রীক গণসংযোগ করছেন প্রতিনিয়ত।সামাজিক সকল ভালো কর্মকান্ডে তিনি সকলকে সাহায্য সহযোগিতা করতেছেন।উপজেলার ভোটারদের মুখে মুখে শুধু তার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন।এ আসনে আগামী নির্বাচনে জামায়েতে ইসলামীর প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার।সে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। ছাত্র জীবন থেকে দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া এই নেতা একজন দক্ষ সংগঠক।একই সাথে সবপর্যায়ে তার পরিচিতি ও অনেক অনুসারী রয়েছে।সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসন। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জামায়েতে ইসলামী থেকে নির্বাচন করবেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য,জেলা ও মহানগরের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ।তিনি একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী।প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী এলাকার গণসংযোগসহ বিভিন্ন প্রচারণা শুরু করেন জামায়েতের এই নেতা।প্রার্থীরা এখন নিয়মিত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।ছোট ছোট পথসভা, উঠান বৈঠক,বাজার ও মসজিদকেন্দ্রিক গণসংযোগ- সবই চলছে নিয়মিত। ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করে মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায় দলটি। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকনির্দেশনায় নির্বাচনী কর্মকৌশল সাজাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।