রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষার্থী এক পাহাড়ি ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা।
আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল সাড়ে ৯টার সময় বাঘাইহাট বনানি বন বিহার গেইট দুই নারী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও এলাকার নারীরা লাঠি ও ঝাড়ু সহকারে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বালুঘাট এলাকা হয়ে সাজেকের মেইন সড়কের রেতকাবা মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে প্রায় ৮ শ জনের মতো নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অমিতা চাকমার সভাপতিত্বে ও অর্পনা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জলা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নন্দা চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিশাখা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি নিউটন চাকমা।
সমাবেশে পিসিপি নেতা সুনিল ত্রিপুরা বলেন, সরকার ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস গঙদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বার বার এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শুধু কল্পনা চাকমা অপহরণ নয়, আমরা তুমাচিং মারমা থেকে শুরু করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা দেখেছি। কিন্তু এসব কোন ঘটনার বিচার হয়নি।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত যে ধর্ষণ, খুন, গুমের ঘটনা ঘটছে সেগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি জাতিগত নিপীড়নের একটি রোল মডেল। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হয়, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তার কোন ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয় না।
তিনি বলেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের আপামর জনতার ওপর যেভাবে ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা তারই আলামত দেখতে পাচ্ছি। এই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা যতদিন স্বাধীন বাংলাদেশে থাকবে ততদিন ধর্ষণ, গুম, খুন হত্যা বন্ধ হবে না। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, কাপ্তাইয়ের যে গণধর্ষণের ঘটনা, তা কাপ্তাইয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই ঘটনা সাজেক, তাইন্দং, তবলছড়ি থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে আনাচে কানাচে যেসব সেনা ক্যাম্পগুলো রয়েছে তাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আমাদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছি এ ধরনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা প্রতিহত করে আমাদের মুক্তির যে সংগ্রাম সেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে সামিল হতে হবে।
তিনি কাপ্তাইয়ে যে সকল সেনা সদস্যরা গণধর্ষণের সাথে জড়িত রয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে অথবা সেনা আইনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি কল্পনা চাকমা অপহরণ থেকে শুরু করে কুমিল্লায় তনু হত্যাসহ সারা দেশে যেসব ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তারও সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী নন্দা চাকমা সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী প্রতিয়িত ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের রাইখালিতে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার ছয়দিন অতিবাহিত হলেও গণধর্ষণে জড়িত সেনা সদস্যদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি। সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
তিনি ধর্ষণকারী সেনা সদস্যদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নারী সমাজসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি কাপ্তাইয়ে গণধর্ষণের ঘটনা সুষ্ঠু তন্দের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে গণধর্ষণকারী সেনা সদস্যদের কুশপুত্তলিকায় থুতু নিক্ষেপ করে, লাথি মেরে ও লাঠি-ঝাড়ু দিয়ে আঘাত করে কাপ্তাইয়ে ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে আগুন দিয়ে ধর্ষকদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।