মো. আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত এবং অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। কিশোরগঞ্জের তাড়াইলেও একই চিত্র। তাড়াইল উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটি বাজারে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যে পিষ্ট হচ্ছে এ উপজেলার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে চাল, চিনি, পেঁয়াজ, মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের। সেই সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এতে অধিকাংশ পণ্যই এখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এর ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন তাঁরা। পণ্যের দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
১৪ অক্টোবর ২০২৩ (শনিবার) উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল কেজি প্রতি কাটারি ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান ৭০ টাকা, নাজির শাইল ৬০ টাকা, বিআর(২৮) ৫৬ টাকা, বিআর(২৯) ৫০ টাকা, কাটা চাউল ৪০ টাকা, আতব ৪৫ টাকা, পোলাও ৯৫ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৫০ টাকা, মুশুরির ডাল ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ৮০ টাকা, মুগের ডাল ১৩০ টাকা, ডিম ৫০ টাকা হালি, তেল ১৭০ টাকা লিটার এবং খোলা তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, আদা ২২০ টাকা, আলু ৬০/৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, হলুদ ২৪০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিচ ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, সীম ১৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঝিংগা ৭০ টাকা, কাকরুল ৮০ টাকা, শসা ৯০ টাকা, লতা ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, মুহি ৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, জলপাই ৫০ টাকা, লেবু ৬০ টাকা, ধনিয়া পাতা ২২০ টাকা, পটল ৬০ টাকা কেজি।
এদিকে মাংসের বাজারে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, কক ৩৪০ টাকা, লেয়ার কক ৩৫০, ক্লাসিক ৩০০, বার্মিজ ২৬০, গরুর মাংস ৫৮০ টাকা, খাসি ১০৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তাড়াইল বাজারের ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও হুমায়ুন আহম্মেদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে কাঁচা বাজারের দ্রব্যের দাম একটু বেশি। প্রতি সপ্তাহে কাঁচাবাজারের দাম উঠানামা করছে। তবে শীতের সিজনে আরেকটু কমতে পারে।
বাজার করতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম উর্ধ্বমুখি। বাজার করতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে সকল পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমরা যারা নিম্ন আয় ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক তাদের বাজার কিনে খেয়ে বেঁচে থাকার মতো অবস্থা নেই। তারা আরো বলেন, গরু ও খাশির মাংসের কাছে তো অনেক আগে থেকেই ঘেষা যাচ্ছে না। মধ্যবিত্তের মাংসের খাবার বলতে ব্রয়লার মুরগী তারও দাম বেড়ে গেছে। ফলেে এক-দুই মাসের মধ্যে মুরগীর মাংসও কিনতে পারছি না। সবকিছু আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
বাজার করতে আসা মহর উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন বলেন, আমাদের দুর্দশার শেষ নেই। আয় বাড়েনি অথচ সবকিছুর দাম উর্ধ্বমূখী। মাছ, মাংস, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজির বাজারেও আগুন। দ্রব্যমূল্যের এতো দাম যে, যা কিনতে বাজারে আসছি তার কিছু কিনেছি আর বাকিগুলো না কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
তাড়াইল সদর বাজারের ও মনোহারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, চিনির দাম বেড়ে আবার কমেছে। চালের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির দাম একটু বেশি। মৌসুম শেষের সময় সবকিছুর দাম বেশি হয়। দাম বেশি হলেও মানুষ খেয়ে বাঁচার জন্য তা কিনতে হচ্ছে। মানুষ আগের তুলনায় কম কিনছে। কিছু দিন পর সবজির দাম কমদে পারে। তারা আরো বলেন, গত এক সপ্তাহ পাইকাররা প্রতিদিনি ৫-১০ টাকা করে দাম বাড়াচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়ায় পাইকাররাও দাম বেশি নিচ্ছে। আমাদেরও বেশি দামে মাল কিনতে হচ্ছে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গত তিনদিন আগে আমরা প্রশাসনিক ভাবে একটি মিটিং করে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছি যে, সরকার নির্ধারিত দামে সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।