বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো:
২১ নভেম্বর সকালে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সারাদেশ কাঁপিয়ে ১০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়ে সাথে অসংখ্য মানুষ হতাহত সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির রক্তদাগ শুকাতে না শুকাতে ঘূর্ণিঝড়ের দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস। তাদের এক ফেইসবুক ভেরিফাইড পেইজে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন বাংলাদেশ একসময় আবহমান ষড়ঋতুর অন্যরকম রূপবৈচিত্রর দেশ ছিল গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত প্রতিটি ঋতুর সাথে প্রকৃতির পরিবর্তনের এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল যা উপলব্ধি করা যেত প্রতি দুই মাস অন্তর কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি হারিয়ে ফেলেছে নিজের বৈশিষ্ট্য।
অনাবৃষ্টি অধিক গরম সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টির ফলে একই বছরে বারবার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে দেশ,এতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে দেশের প্রকৃতির সম্পদ সবুজ অরণ্য হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা রূপ।
ফলে আবহাওয়া তার বৈরী আচরণে বিক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে ভূমিকম্প ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতন ভয়াবহতার রূপ ধারণ করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে একদিনের ব্যবধানে তিন তিনবার ভূমিকম্পের কারণে
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল খুলনা সহ পুরো দেশবাসী। এর মধ্যেই এবার বঙ্গোপসাগরে বড় এক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে বলে সতর্কতা এসেছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এটি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আজ ২২ নভেম্বর পাওয়া সর্বশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে আগামী ২৫/২৬ শে নভেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে (আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের দক্ষিণ পাশে) একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। এই লঘুচাপটি পর্যায়ক্রমে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও সর্বশেষে ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী যে কোন স্থানের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত করার আশংকা করা যাচ্ছে আগামী ১ লা ডিসেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ এর মধ্যে। সম্ভব্য এই ঘুর্নিঝড়ের কারণে ৩০ শে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।’
কৃষকদের জন্য পরামর্শ দিয়ে গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপরে হালাক থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে জমিতে থাকা পাকা আমন ধান কাটা ও মাড়াই করা শেষ করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
শীতকালীন শাক-সবজি চাষিরা সম্ভব্য এই বৃষ্টিপাতের কথা মাথায় রেখে বীজ বোনা ও জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত জন্য রোদ্দৌজ্জল আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে পুরো দেশে।
সমুদ্রগামী জেলাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখের পর থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উত্তাল হওয়ার শুরু করার আশংকা করা যাচ্ছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে উপকূলে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। ২৯ শে নভেম্বরের পরে নতুন করে সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সেন্টমার্টীন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, ২৮ তারিখের পর থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উত্তাল হওয়ার শুরু করার আশংকা করা যাচ্ছে। ৩০ শে নভেম্বরের থেকে ৪ ঠা নভেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ ও সেন্টমার্টীন দ্বীপের মধ্যবর্তী সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকার আশংকা করা যাচ্ছে। ফলে এই সময়ে পর্যটন সম্পর্কিত ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

