নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে কেন গড়িমসি করা হচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে নির্বাহীর খুঁটির জোর কোথায়?
গত ২৭ আগষ্ট সন্ধায় এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে ‘উন্নয়ন প্রকল্পের টার্গেট বাস্তবায়নে অগ্রগতি-বিলম্ব নিয়ে’ মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের সাথে ‘ভার্চুয়াল সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজগঞ্জে এলজিইডির ‘উন্নয়ন প্রকল্পের টার্গেট’ পুরণ না হওয়ার পাশাপাশি ‘সরকারি তহবিল ফেরত’ যাওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগের কারনে সভার শুরুতেই নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের দুর্ণীতির বিস্তর অভিযোগ করে নানান কথা বলেন মন্ত্রী । আর এ জন্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে প্রধান প্রকৌশলীকে তাৎক্ষনিক নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু ইতিমধ্যে ১২ দিন অতিবাহিত হলেও সেই শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনেকেই বলছেন ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা উল্টো নানা কায়দায় নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুলকে নানাভাবে সহায়তা করছে এলজিইডির কর্তৃপক্ষ এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর আগে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের ‘ভদ্রাবাতি খাল খননে’ সরকারি ৩ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম এবং তার নিজ দপ্তরের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে মন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। সেজন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রতি সভায় বিরুপ মন্তব্য ও তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
এছাড়া, টেন্ডার-কোটেশন ছাড়া কামারখন্দে রাস্তা সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন, এ উপজেলায় কাজ না করেই বিল উত্তোলন, সংবাদ প্রকাশের পর তরিগড়ি করে কিছু নিন্মমানের কাজ বাস্তবায়ন এবং উর্ধ্বতনের ‘অনাপত্তি সনদ’ ছাড়া বিধি-বর্হিভুতভাবে তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও কাজিপুরে মেরামত-সংস্কার কাজে ঠিকাদারদের ৩০ কোটি টাকার চুড়ান্ত বিল পরিশোধ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব নিয়ে সিরিজ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এলজিআরডি মন্ত্রী ওইসব সংবাদ দেখে সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের প্রতি চরম অসন্তষ্টু হন। মুঠোফোনে প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে অভিযুক্ত হলে তারপর দেখা যাবে।’ অন্যদিকে, অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা নিউজ করে কি করবেন, দেখা যাবে। কারা ব্যবস্থা নেবেন। চেষ্টা করে দেখেন, শেষ পর্যন্ত কামিয়াব হন কি,না।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ দেখে উর্ধ্বতনের নির্দেশে পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ‘খাল খননের লোপাটের’ ঘটনার তদন্ত করেছেন। তার তদন্তেও শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত হন সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাব বলেন,‘সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা তাড়াশের ভদ্রবাতি খাল খনন নিয়ে যে ধরনের সংবাদ পরিবেশন করেছেন, মাঠ পর্যায়ে তদন্তকালে আরো ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমান মেলেছে। যেনতেন ভাবে খাল খনন করে সিংহভাগ সরকারি টাকা লোপাটে ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধেই প্রতিবেদনও তৈরী করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত: তাড়াশে ‘ভদ্রাবতি’ খাল খননে ভুয়া মাস্টারোলে মাটি কাটার কাজে মৃত শ্রমিকদের ‘জীবিত’ দেখিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ও নিজদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় তিন কোটি লোপাট করে। এরপর কামারখন্দের ঝাঐল-ভারাঙ্গায় টেন্ডার কোটেশন না করেই প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ ব্যায়ে ৩টি স্থানে নামেমাত্র হেরিংবন কাজ করানো হয়। সরকারী ‘পরিপত্র’ উপক্ষো করে গায়ের জোরে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজ দপ্তরের ৩০ কোটি টাকার মেরামত ও সংস্কার কাজের ‘চুড়ান্ত বিল’ পরিশোধে করেন। এরমধ্যে সাড়ে ১২ কোটি টাকার রাস্তা তাড়াশ-কুন্দইল-বারুহাস’ (আইডি নং-১৮৮৮৯২০১৬ ও ১৮৮৬১২০০৩), রায়গঞ্জের নিমগাছি-সলঙ্গা রাস্তা (আইডি নং-১৮৮৬১২০০৩), কাজিপুরের মনসুরনগর ইউনিয়ন-ছালালহাট রাস্তা (আইডি নং-১৮৮৫০৩০১৫) ও ৮১ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতুর নির্মাতা । কাজিপুরের সোনামুখী-ভানুডাঙ্গা রাস্তা (আইডি নং-১৮৮৫০২০০৮)ও সোনামুখী-হরিনাথপুর রাস্তা (আইডি নং-১৮৮৫০২০০৪) রয়েছে।