মো:জাকির হেসেন নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধের মুখে ভেস্তে গেছে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ফুটপাত ফুটপাতের দখল মুক্ত করণ অভিযান। এসময় পৌর কর্মচারী ও দোকান মালিক শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মালামাল জব্দ ও নষ্ট করা এবং হেনস্তার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করাসহ ৩ ঘন্টা দোকানে ধর্মঘট পালন করেছে ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন খোকন এসেছে এসে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে অস্থিতিশীলতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তাদের সাথে পৌরসভার মেয়র, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, অশ্লীল গালিগালাজ ও মারধরের বিচার দাবী করেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে অভিযানে নামে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন পৌর সচিব সাহিদুল ইসলাম, প্রকৌশলী শহিদুল হকসহ কয়েকজন কাউন্সিলর ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। শহরের শহীদ সামসুল হক সড়ক, কলাহাটি সড়ক, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক ও শহীদ তুলশীরাম সড়কের দুইপাশের ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে মালামালের পসরা উচ্ছেদ করে।
অভিযান কালে সবজি বাজারের সামনে লাল্লু নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাঁচা মালামাল তুলে নিতে গেলে তিনি বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন। এতে তার মালামাল রাস্তায় ফেলে দেয়া হয় এবং তাকে মারধর করা হয়। এখানে ২০-৩০ দোকানের মালামাল জব্দ করে নিয়ে যায়। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পরে শহীদ জিকরুল হক সড়কে শিল্পপতি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিউটি সাইকেল স্টোরের সামনে থেকে বস্তায় রাখা মালামাল জব্দ করতে গেলে দোকানের কর্মচারীরা বাধা দেয়। এতে জবরদস্তি করায় প্রতিবাদ করলে পৌর কর্মচারীরা চড়াও হয়। এতে দোকানের কর্মচারীদের সাথে হাতাহাতি শুরু হয়। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাস্তা নেমে আসে। ফলে পৌর মেয়র সহ সবাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
শিল্পপতি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার মালামাল তুলে নেয়ার অপচেষ্টা করেছে মেয়র। কেননা দোকানের সামনে মালামালগুলো আমার প্রতিষ্ঠানের ছাদের নিচেই রাখা আছে। এটা ফুটপাত নয়। আমি নিজে তাদের অনুরোধ করলেও তারা প্রচন্ড বাড়াবাড়ি করে। জবরদস্তি করে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে।
কলাহাটির সবজি বিক্রেতা লাল্লু বলেন, আমার দোকান সঠিক জায়গায়। এজন্য রাস্তায় যানজটের কোন কারণ নাই। তারপরও জোর করে মালামাল জব্দ করে পৌর কর্মচারীরা। প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে মারধর করে। তারা কি এভাবে মারতে পারে? আমি গরীব দেখে কি এমন অত্যাচার করলো মেয়র। এর বিচার চাই।
জিকরুল হক সড়কের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী সালাবাত হোসেন বলেন, মূলতঃ শহরে যানজটের কারণ ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় শহরে প্রবেশ করায় ও যত্রতত্র থামানো এবং বেপরোয়া ভাবে চলাচল করায় লোকজন ভোগান্তিতে পড়ছে। সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। যত দোষ দোকানদারদের। ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান ও অতিরিক্ত পসরা সরানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোন বাধা নাই। কিন্তু মালামাল জব্দ করা, নষ্ট করা ও গায়ে হাত তুলতে পারেনা।
আওয়ামী লীগ নেতা প্রফেসর সাখাওয়াত হোসেন খোকন বলেন, এই মেয়র অদূরদর্শী এবং অযোগ্য। কেননা সে দয়ার মেয়র, জনগণের নয়। তাই জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। রাস্তা গুলোর বেহাল দশা। সেদিকে কোন খেয়াল নাই। আজ তাফসিল ঘোষণা নিয়ে এমনিতেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন সময় এরকম হটকারী কাজ করে জনমনে নেতিবাচক ধারণা উস্কে দেয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এই অন্যায়ের ফয়সালা করা হবে। তবে আপাতত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অবরোধ ও ধর্মঘট প্রত্যাহারকরে দোকান খুলে ব্যবসার আহ্বান জানান তিনি।
পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।