আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের উপশহর এলেঙ্গায় সরকারী শামসুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল কবীরেব র বিরুদ্ধে সরকারী প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ অমান্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৭ বছরে কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, কলেজে জাল সার্টিফিকেটধারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই শিক্ষককে সরকারী করণ, প্রজ্ঞাপনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষককে প্রমোশন দেওয়া এবং সহকারী গ্রন্থাগারীকে গ্রন্থাগারিকের গ্রেডে বেতন দেওয়া। এনিয়ে ওই কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জানাগেছে, ১৯৭২সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মে কলেজটি এমপিও ভুক্ত হয় এবং ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারী করণ হয়। সরকারী করণ হওয়ার পর যোগ্যতা না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছোঁয়ায় থেকে অধ্যক্ষের পদটি ভাগিয়ে নেন আনোয়ারুল কবীর। শুরু হয় তার নানা অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা। কলেজের জায়গা নিজের স্ত্রীর নামে লিখে দেওয়া, জাল সনদধারী প্রভাষক(বাংলা) কে বৈধতা দেওয়া, অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করা, পদন্নতি করা,অর্থআত্বসাৎ করে অনিয়মকে নিয়ম করাই তার কাজ।
সুত্র জানায় সম্প্রীতি অক্টোবরের ১০ তারিখে দেশের দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইনডেক্স প্রাপ্ত (জাল সনদধারীদের) বেতন ভাতা ও সরকারী অংশ সাময়িকভাবে স্থগিত সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উক্ত পত্রে শামসুল হক কলেজের দর্শনের প্রভাষক মো. মসলেম উদ্দিনের (ইনডেক্স ৩০৮২৩৭১) নাম তালিকায় ১ নম্বরে প্রকাশ হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রতিষ্ঠান গুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তালিকায় বর্ণিত এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত সাতটি বিষয়ের মধ্যে কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তার দফাওয়ারী জবাবের ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে জন্য নির্দেশ করা হয়। কিন্তু উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক মোহাম্মদ মসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন ও অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবীর কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অধ্যক্ষ নিজে ডিজি অফিসের ইন্সপেক্টর খালেকুজ্জানের সাথে আতাত করে প্রভাষক মসলেম উদ্দিনকে অবৈধভাবে চাকুরী সরকারী করণে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও অধ্যক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানের মো. লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দিয়ে গ্রন্থাগারিক পদের বেতন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুত্র জানায় মো. লুৎফর রহমানকে নিয়োগ দিলেও জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রন্থাগারিকের বেতন দিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গ্রন্থাগারিকের বেতন তুলেন লুৎফর রহমান। সম্প্রীতি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ হলে ওই লুৎফর রহমানকে সহকারী গ্রন্থাগারিকের বেতন দিচ্ছেন, এটা বিরাট প্রতারণা এবং কি ২০১৬ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় করণের লক্ষে নিয়োগ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্থব্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সে বছরই বাংলার প্রভাষক মোখলেছুর রহমানকে পদন্নতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রদান করেন অধ্যক্ষ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী জানায়,অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবীরের প্রতারণার শেষ নেই। ২০১৭ সালে কলেজের সকল সম্পত্তি(স্থাবর-অস্থাবর) সরকারের নামে সচিব বরাবর লিখে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যাহার মধ্যে ৪ শতাংশ জায়গা ২০১৯ সালে জমির মালিক হিন্দু এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন ওই অধ্যক্ষ। বর্তমানেও ওই ৪ শতাংশ জমি কলেজের নামে রেকর্ডকৃত। সেই জমিতে কলেজের জায়গায় কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে বিলাশ বহুল বাসা নির্মাণ করেছে তিনি। গত ৫ তারিখের পর সরকার পরিবর্তন হলে বিপাকে পড়েন ওই অধ্যক্ষ। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় মীমাংসা করেন। পরে গত সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর কলেজের ভুমি দখল মুক্ত করণ বিষয়ে ও মামলা সম্পর্কে অবহতকরণ চিঠি প্রদান করেন কলেজের ভুমি দখল মুক্তকরণ আহবায়ক কমিটি।
জালসনদের বিষয়ে মসলেম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারী শামসুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল কবীর মুঠোফোনে শিক্ষক মসলেম উদ্দিসের জানসনদে চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে মসলেম উদ্দিনের আত্মীয় আছে তাকে ধরেই তিনি কাজ করেছে। এছাড়াও সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এতোসব সম্পত্তি তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে করেছেন।
সরকারী শামসুল হক কলেজের জাল সনদধারী দর্শনের প্রভাষক মো. মসলেম উদ্দিনের বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নওসের আলী মুঠোফোনে বলেন আমি নতুন যোগদান করেছি, প্রজ্ঞাপণ জারীর দশ কর্মদিবসের মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি জবাব না দিয়ে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।